পদ্মা সেতু : উজ্জীবিত রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা

আজ শনিবার থেকে চালু হচ্ছে পদ্মা সেতু। এতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে। যদিও সেতু চালুর কারণে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া, শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দি ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাটের নৌযান মালিক-শ্রমিক ও হকারদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়েছে। তবে শিমুলিয়া ঘাটের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা এখন উজ্জীবিত। পদ্মা সেতুর কারণে ব্যবসা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সম্প্রতি গড়ে ওঠা বিভিন্ন অভিযাত রেস্তোরাঁয় সর্বনিম্ন ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। মোট বিনিয়োগ অন্তত ৩০ কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, পদ্মা সেতু তাঁদের জন্য আশীর্বাদ। আগে লোকজনের সমাগম ছিল কম। পদ্মা সেতু ঘিরে লোকজনের আনাগোনা বাড়ায় রেস্তোরাঁয় ইলিশের চাহিদাও বেড়েছে। প্রতিদিন টনে টনে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। ছুটির দিনে চাহিদা বাড়ে কয়েক গুণ।

‘হিলশা প্রজেক্ট’ নামে রেস্তোরাঁয় প্রতিদিন অনেকে আসেন রুপালি ইলিশের স্বাদ নিতে। বাদ যান না মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ বিশিষ্টজনরাও। প্রায় ২০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে রেস্তোরাঁয়। আরও ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগে বর্ধিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাঁদের গ্রাহক মূলত দর্শনার্থীরা, ঘাট দিয়ে পার হওয়া যাত্রীরা নয়। শিমুলিয়ায় অর্ধশত রেস্তোরাঁ রয়েছে। অধিকাংশই ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মালিক বা অংশীদারদের কেউ প্রবাস ফেরত, কেউ বা করোনাকালে ব্যবসা কিংবা কাজ হারিয়েছেন। হিলশা প্রজেক্ট ছাড়াও বেশ কিছু বিলাশবহুল রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে পদ্মাপাড়ে। নামও বাহারি- রূপসী বাংলা, রুপালি ইলিশ, শখের হাঁড়ি, কুটুমবাড়ি, শখের ইলিশ, ইলিশ আড্ডা, ইলিশ ভোজ ইত্যাদি।

ইলিশ ভোজের মেসিয়ার আমিনুল ইসলাম বলেন, উত্তাল পদ্মা দেখা ছাড়াও সেতু দেখতে শিমুলিয়া ঘাটে আসে মানুষ। সঙ্গে গরম ইলিশের স্বাদ গ্রহণ করেন। মনির হোসেন নামে আরেক মেসিয়ার বলেন, এখানে লোকজন ইলিশের যে স্বাদ পায়, তা অন্য কোথাও পায় না। উৎসবের পরিবেশ থাকে ছুটির দিনগুলোয়।
রাজধানীর গুলশানের বাসিন্দা সামিয়া হোসেন এসেছিলেন স্বজনদের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন পরিবেশ সবখানে নেই। পছন্দের ইলিশ তাৎক্ষণিক কেটে চোখের সামনে সরিষার তেলে ভেজে খেতে খুব ভালো লাগে। পদ্মা সেতু চালু হলে আরও বেশি আসা হবে।

পাঁচ বন্ধু মিলে প্রায় ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ‘শখের হাঁড়ি’ রেস্তোরাঁয়। পরিচালক মাসুম আহমেদ পিন্টু বলেন, অনেকেই বিদেশ না গিয়ে এখানে বিনিয়োগ করে সফল হচ্ছেন। তরুণ উদ্যোক্তা ফরহাদ হোসেন ইমন বলেন, লোকজন খেয়ে তৃপ্তি পায়, তাই আসেন।

রেস্তোরাঁগুলোয় অসংখ্য নারী মাছ কাটা, মসলা বাটা, সবজি কাটাসহ নানা কাজ করেন। তাঁদের একজন সুমি আক্তার বলেন, পদ্মা সেতুর কারণেই দিন দিন ভিড় বাড়ছে। লোকজনকে জায়গা দেওয়া যায় না।

রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ মিয়া মনে করেন, পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এনে দিয়েছে। রেস্তোরাঁ সমিতির সভাপতি মুরাদ খান বলেন, সেতু চালু হলে সবখানে ঘাট মরে যাবে। এখানে হবে উল্টো চিত্র। রেস্তোরাঁ ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়বে না।

শিমুলিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, সেতু চালুর পর বহু মানুষ আসবে পদ্মা সেতু ও নদীর রূপ দেখতে। বিআইডব্লিউটিএ পদ্মাপাড়ে আসা মানুষের সুবিধা নিশ্চিত করতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

সম্প্রতি নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শিমুলিয়া ঘাট পরিদর্শনে এসে বলেন, শিমুলিয়া ফেরিঘাট বন্ধ হবে না। পণ্যবাহী যানের জন্য ফেরির চাহিদা থাকবে। তাঁর মতে, ঘাটে কোলাহল আরও বাড়বে।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, আগত মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ব্যবসায়ীদেরও ভূমিকা থাকতে হবে। তাহলে প্রসার বাড়বে।

সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.