মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর ওপর দিয়ে তেমন কোনো যানবাহন চলাচল করে না। তাই সেতুর ওপরে ফুটবল খেলে স্থানীয় শিশুরা। এমনকি মাত্র ৭ বছর আগে সেতুটি উদ্বোধন করা হলেও নিম্নমানের কাজের কারণে সেতুর রেলিং ভেঙে পড়ছে। সেতুর বুকে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ।
উপজেলার কাঁঠাদিয়া-শিমুলিয়া ইউনিয়নের রহিমগঞ্জ বাজারের পশ্চিম পাশে খালের ওপরে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল আকৃতির একটি সেতু। কিন্তু সেতুর দুপাশের সংযোগ সড়ক ঠিকমতো না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। সেতুর দক্ষিণ এপ্রোচ অংশে গজিয়েছে ঘাস। এতে ৭ বছর আগে নির্মিত সেতুটি তেমন উপকারে আসছে না।
উপজেলার আলদি, কাঁঠাদিয়া, শিমুলিয়া, ধামারন, ধীপুর, মারিয়ালয়, ব্রাহ্মণভিটা, চাপ, লাখারংসহ আশপাশের প্রায় ১৫ গ্রামের মানুষ এই সংযোগ সেতু দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন।
উপজেলার দিঘীরপাড় এফআরবি-বিয়ানিয়া বাজার (রহিমগঞ্জ) সংযোগ সড়কের ওপর ৭৫ মিটার দীর্ঘ এই সেতু। সেতুর প্রস্থ প্রায় ২০ ফুট। ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট সেতুটি উদ্বোধন করেন স্থানীয় সসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর টঙ্গীবাড়ীর বাস্তবায়নে নির্মিত হয় সেতুটি। ২০১০ সালে এটির টেন্ডার হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কিন্তু সেতু নির্মাণ করা হলেও দুপাশে নির্মাণ করা হয়নি পাকা সড়ক। তাছাড়া সেতুর দু-পাশের সংযোগ সড়কটি সেতুর তুলনায় নিচু হওয়ায় যানবাহন চলাচলে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে উদ্বোধনের ৭ বছর না পেরুতেই সেতুর দু-পাশের রেলিংয়ে লম্বা ফাটল দেখা দিয়েছে। কিছু স্থানে রেলিংয়ের অংশ খসে পড়ে লোহার রড বরে হয়ে গেছে। সেতুর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট খানাখন্দ। উদ্বোধনের মাত্র ৭ বছরের মধ্যে সেতুটি বেহাল দশায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলেন, সেতুতে উঠতে হয় কাঁচা রাস্তা দিয়ে। তাছাড়া সেতুর দু-পাশেই স্বাভাবিক মাটি নেই। এজন্য সেতুতে বড় কোনো গাড়ি উঠতে পারে না। কিছু রিকশা, অটোগাড়ি সেতু দিয়ে চলাচল করলেও সেতুতে ওঠার সময় যাত্রী নামিয়ে উঠতে হয়। এজন্য দিনে সেতু দিয়ে ১০০ গাড়িও চলাচল করে না।
স্থানীয় কাজল দেওয়ান বলেন, সেতুটি উদ্বোধন করা হয়েছে মাত্র ৭ বছর। এর মধ্যেই অনেক জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে। রেলিং স্থানে স্থানে ভেঙে রড বের হয়েছে। কোনো রকম ইট-পাথর দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার অনেক টাকা খরচ করে বিশাল সেতু বানাইছে কিন্তু অল্প টাকা ব্যয় করে দু-পাশের রাস্তা বানাতে পারছে না। যার কারণে সেতু আমাদের কোনো উপকারেই আসছে না।
স্থানীয় রাজিব হোসেন বলেন, সেতুর দুপাড়ের গোড়ায় স্বাভাবিক মাটি নেই। এজন্য ঠিকমতো গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। সারাদিনে এ পথ দিয়ে ১০০ গাড়িও চলে না। সেতুর গোড়ায় মাটি না থাকায় প্রায়ই অটোরিকশা উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ২০১০ সালে সেতুটির টেন্ডার হয়। ব্যয় ধরা হয় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আমি সেতুটি পরিদর্শন করেছি। আমরা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য উপজেলার ১৪-১৫টি সেতু সংস্কারের জন্য খসড়া করেছি। এর মধ্যে কাঁঠাদিয়া-শিমুলিয়া ইউনিয়নের সংযোগ সড়কের ওপরের সেতুটিসহ দুটি সেতু সংস্কারের জন্য রাখা হয়েছে।
ব.ম. শামীম/ঢাকা পোষ্ট
Leave a Reply