‘মন্ত্রীরাই কি দেশের সবকিছু’ লাফ দেওয়ার আগে নুরুজ্জামান (ভিডিও)

নিখোঁজের ২৭ ঘণ্টায়ও খোঁজ মেলেনি পদ্মা সেতু থেকে নদীতে লাফ দেওয়া পোশাকশ্রমিক নুরুজ্জামানের (৩৮)। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে মাওয়া নৌপুলিশ। সকালে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে ঘটনাস্থলে এলেও নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে কার্যক্রম স্থগিত করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।

এদিকে সেতু থেকে লাফ দেওয়ার আগে নুরুজ্জামানের গাড়িতে বসে নিজের মোবাইলে ধারণ করা তিনটি ভিডি ক্লিপ গণমাধ্যমের হাতে এসেছে। যেখানে স্বাধীনতা, অধিকার, বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি না জানাতে পারাসহ বেশ কিছু বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাকে।

ধারণ করা ভিডিওতে নুরুজ্জামানকে বলতে শোনা যায়, “আমি শ্রমিক সংগঠনের একজন সদস্য। ‘নুরুজ্জামান ভাই’ হিসেবে পরিচিত আমি। এখানে (গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে) শুধু দেখলাম মন্ত্রী-মিনিস্টার, তাদের কিছু লোক আর প্রশাসনের কিছু লোক। তারাই কি দেশের সবকিছু, তারাই কি শুধু দেশে ভূমিকা রাখে? আমাদের কি কিছুই ভূমিকা নাই? তাইলে সরকার নিজে বলছে ৮০ ভাগ অর্থ আসতাছে গার্মেন্টস থেকে, যা পোশাকশ্রমিকদের শ্রম দিয়ে। তো তাদের ভূমিকা কোথায় গেলো? আমি তাদের অধিকার চাই, স্বাধীনতা চাই।”

তিনি আরও বলেন, ‘আমি সাধারণ একজন। আমার কথা কেউ দাম দিলে দিতেও পারেন, নাও দিতে পারেন। কিন্তু আমি মনে করি বিষয়টা একবারে ছোটখাটো নয়। বিষয়টা অনেক জটিল। স্বাধীন দেশে যদি আমরা মনের আবেগ প্রকাশ করতে না পারি, মনের ভিতর কষ্টটা বা কারও প্রতি কারও ফিলিংসটা না বের করতে না পারি তাইলে তো দম বন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার মতো লাগতাছে। এত কিছু থাকতেও মনে হচ্ছে কিছু নাই। যেখানে আমার সম্মান নাই, স্বাধীনতা নাই।’

নুরুজ্জামানকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘আরেকটা কথা না বললেই নয়। জাতির পিতা বলতে কী বোঝায়? বোঝায় বঙ্গবন্ধু আমাদের সবার পিতার মতোই। পিতার সমতুল্য ছিল, তাই তার ডাকে আমরা সবাই সাড়া দিয়েছিলাম। জাতির পিতা বললেন কিন্তু পাইলাম না। বঙ্গবন্ধুর কিন্তু আমরা বন্ধু হতে পারলাম না, সম্মান দিতে পারলাম না।’

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে না পেরেও আক্ষেপ প্রকাশ করেন নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘সকালে আমি উঠছি, তাহাজ্জুদ-ফজরের নামাজ পড়ছি। পরে গাড়ি ভাড়া করে বেশি টাকা দিয়ে আমি আসছি (গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া)। আমার এই কষ্টের দাম কে দেবে? এই ত্যাগ স্বীকার কার জন্য? জাতির পিতার প্রতি ভালোবাসা কি আমাদের মিথ্যা? নাকি আরও কিছু করে দেখাতে হবে। আমার আর কিছু বলার ভাষা নাই। কষ্টে আমার বুক ফাইট্টা যাচ্ছে।’

আরেকটি ভিডিও ক্লিপে নুরুজ্জামান বলেন, ‘ভিডিওগুলো দেখে অনেকে বলতে পারেন জাতির পিতার জন্য এত ত্যাগ, নিজের পিতার জন্য কি এতটুকু করছেন? না, আমার পিতা শুধু একটা সংসার দেখেছেন। জাতির পিতা পুরো দেশের কথা চিন্তা করেছেন। পুরো দেশের জন্য সে জান দিছে। আমার পিতা আমার পরিবারের জন্য শুধু কষ্ট করছে। তো তার জন্য এত ত্যাগ হয় না।’

নিখোঁজ নুরুজ্জামানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানায়। তিনি নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের উর্মি গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।

নুরুজ্জামানের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে মাওয়া নৌপুলিশের ইনচার্জ ওহিদুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, সোমবার সকালে তারা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে বেলা ১১টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পদ্মা সেতুতে ঢাকাগামী লেনটিতে কাজ চলছে। যে কারণে প্রাইভেটকারটি ধীরগতিতে ছিল। নুরুজ্জামান পেছনের সিটে ছিলেন। হঠাৎ গাড়ির দরজা খুলে তিনি নদীতে লাফ দেন। তবে সঠিক কী কারণে তিনি লাফ দিয়েছেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরাফাত রায়হান সাকিব/এসআর/জেআইএম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.