মুন্সীগঞ্জ হাসপাতালের সর্বনিম্ন দরদাতাকে পুকুর ইজারার অভিযোগ

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের পুকুর ইজারায় পুকুরচুরির অভিযোগ উঠেছে। দরপত্রে অংশ নেয়া চার প্রতিষ্ঠানের প্রথম সর্বোচ্চ, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে ইজারা দেয়া হয়নি। কিন্তু সর্বোচ্চ দরদাতার অর্ধেকেরও কম টাকায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে পুকুর ইজারা দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের বিপুল রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথম সর্বোচ্চ দরদাতা সালেহা ট্রেডার্স ৭ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা আদর এন্টারপ্রাইজ ৬ লাখ টাকা, তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা গাজী এন্টারপ্রাইজ ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকায় ইজারার শিডিউল দাখিল করে। আর চতুর্থ সর্বোচ্চ দরদাতা আল মক্কা ট্রেডার্স মাত্র ৩ লাখ ২০ হাজার টাকায় শিডিউল দাখিল করে পুকুর ইজারা পেয়ে গেছে।

এই দরপত্র কমিটির সভাপতি এবং হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকার কারণে প্রথম তিনটি ইজারার শিডিউল টেন্ডার ওপেনিং কমিটি বাতিল করে। মূল্যায়ন কমিটিতে একটি মাত্র বৈধ দরপত্র ছিল। তাই সর্বনিম্ন দর হলেও বৈধ দরদাতাকেই পুকুরটি ইজারা প্রদান করা হয়েছে। এটি কমিটির সিদ্ধান্ত বলেই তার দাবি।

তবে টেন্ডার কমিটির সদস্যসচিব এবং টেন্ডার ওপেনিং কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চারটি দরপত্রই মূল্যায়ন কমিটিতে পাঠানো হয়।

তবে কমিটির সদস্য জেলা মৎস্য অফিসার শামশুল করিম জানান, এসব দরপত্র কমিটিতে সভাপতি ও সদস্যসচিবের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবে তারা যা চান তাই হয়ে থাকে। তিনি বলেন, তারা ছবি না থাকার কারণে একটি, ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি না থাকার কারণে একটি এবং অপরটি এমন সামান্য কিছু কাগজের জন্যই বাতিল করেছে। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির কথা চিন্তা করে তারা ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি বা ছবি নিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকেই পুকুর ইজারা দিতে পারতেন।

এদিকে সর্বোচ্চ দরদাতা তিন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারই দাবি করেছেন, তারা সব কাগজপত্র শর্তাবলি অনুযায়ী সঠিকভাবেই দিয়েছেন। এ ছাড়া ইজারার শিডিউল পূরণ করেছেন, যা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। সর্বোচ্চ দরদাতা সালেহ ট্রেডার্সের মালিক নুরুজ্জামান বাঁধন অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আঁতাত করে ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির জন্য সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করছে। তার শিডিউলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সব কাগজ ও ছবি যুক্ত করা ছিল। তাদের পছন্দের লোককে ইজারা দেয়ার জন্য কাগজ ফেলে দিয়েছে।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সাত মাস আগেই পুকুরটি ইজারার সময় শেষ হয়ে যায়। সম্প্রতি পুরনো ইজারাদারের কাছ থেকে পুকুরের দখল বুঝে নেয়। পুকুরটি যেই অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই নতুন ইজারা দেয়ার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু টেন্ডার চলাকালে আগের ইজারাদার যোগসাজশে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মাছ ধরে নিয়ে যায়। এই মাছ ধরার প্রক্রিয়াটিও ছিল অবৈধ। পাম্প স্থাপন করে পুকুরের প্রায় ছয় ফুট পানি সরিয়ে ফেলে। বিষ প্রয়োগ করে সব মাছ তুলে নেয়। এতে পুকুরটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পানি এবং পরিবেশ। পুরো বিষয়টিরই সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তিনি।

হাসপাতালটির বিশাল পুকুর তিন বছরের জন্য ইজারা দিতে সিভিল সার্জন অফিস দরপত্র আহ্বান করে। চার প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। চার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির মাধ্যমেই ১০ আগস্ট দুপুর ২টায় সিভিল সার্জন অফিসে দরপত্র খোলা হয়। সবার উপস্থিতিতে চারটি ইজারার শিডিউল প্রাথমিকভাবে সঠিক উল্লেখ করে টেন্ডার কমিটির সদস্যসচিব এবং টেন্ডার ওপেনিং কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সাখাওয়াত হোসেন । তিনি জানান, চারটি দরপত্রই মূল্যায়ন কমিটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

সময় টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.