‘রেডিমেড’ ঘরের হাট

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু: সংসারে চাল-ডাল, তেল, লবণ প্রয়োজন, বাজারে গিয়ে কিনে আনছেন। জামা-কাপড় দরকার, মিলছে দোকানে। কিন্তু চাইলে বাজার থেকে কেনা যাবে আস্ত ঘর! অবাক হলেও সত্য, মুন্সীগঞ্জের সদর, টঙ্গিবাড়ী, লৌহজং, সিরাজদীখান উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে এমন ‘রেডিমেড’ ঘরের হাট। নব্বই দশক থেকে চলে আসা এই হাটে জমে উঠেছে ঘর বিকিকিনি।

মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়ানোর সময় চোখে পড়বে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে একাধিক ঝকঝকে ‘রেডিমেড’ নতুন ঘর। ক্রেতাদের পছন্দের কথা ভেবে নানা কারুকার্য এবং উন্নতমানের টিন ও কাঠ দিয়ে এগুলো তৈরি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এটি বিক্রমপুর তথা মুন্সীগঞ্জেরও ঐতিহ্য।

মূলত নদীভাঙনসহ মুন্সীগঞ্জের আবহাওয়ার অবস্থার কথা চিন্তা করে ঘরগুলো নির্মাণ করা। সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী ইউনিয়নের চুড়াইন গ্রামে এমনই হাটে কথা হয় মিস্ত্রি সনৎ চন্দ্র বালার সঙ্গে। গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের কলি গ্রামের এই বাসিন্দা ১৭ বছর ধরে চুড়াইন গ্রামে ঘর তৈরি করছেন। সঙ্গে আছেন আরও ১১ মিস্ত্রি। বিভিন্ন কারুকাজ করা ৯টি ঘর তাঁরা বিক্রির জন্য ভিটায় রেখেছেন। প্রতিটি ঘরই চৌচালা।

মানভেদে একেকটির দাম একেকরকম। ভিটায় থাকা টিয়া রঙের টিন দিয়ে তৈরি ঘরের দাম চাওয়া হচ্ছে ৫ লাখ টাকা। সনৎ চন্দ্র বালা জানান, সাড়ে ৪ লাখ টাকার নিচে ঘরটি বিক্রি করা হবে না। আড়াই লাখ টাকার নিচে কোনো ঘর নেই বলে জানান আরেক মিস্ত্রি অজিত মণ্ডল। সুমন শেখ, ফিরোজ তালুকদার, আউয়াল শেখ, ইসলাম মিয়াসহ চুড়াইন গ্রামের অন্তত ৩০ ব্যবসায়ী ‘রেডিমেড’ ঘর বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মানুষের সমস্যা পর্যবেক্ষণের পর তা সমাধানের কথা চিন্তা করে মুন্সীগঞ্জ সদরের ধলাগাঁও বাজারের আব্দুর রহমান ঢেউটিন দিয়ে প্রথম রেডিমেড ঘর তৈরি করেন। দীর্ঘ ৯ বছর সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটানোর পর তিনি এই ব্যবসায় যুক্ত হন। এর পর কেটে গেছে ২৫ বছর। আব্দুর রহমানের দেখাদেখি জেলার সদর, টঙ্গিবাড়ী, লৌহজং, সিরাজদীখানসহ বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘রেডিমেড’ ঘর। অবশ্য এক সময় কাঠের টুকরো জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হতো এসব ঘর। ফলে অল্প দিনেই তা নষ্ট হয়ে যেত।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখন দিন বদলেছে। ক্রেতারা জোড়াতালির ঘর নিতে চান না। এ জন্য ভালো কাঠ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ টিন ও কাঠের ঘরের মায়া ছাড়তে পারেননি। এ জন্য তাঁরা ভিটে ইটের করলেও তার ওপর ‘রেডিমেড’ ঘর বসাচ্ছেন। এ ছাড়া নদীভাঙনের কারণে মানুষের কাছে পাকা ভবনের চেয়ে টিন-কাঠের ঘরের কদর বেশি।

মিস্ত্রি অজিত মণ্ডল বলেন, উন্নতমানের নাইজেরিয়া, লোহাসহ বিভিন্ন জাতের কাঠ দিয়ে ঘর বানানো হয়। ক্রেতারা ঘর কেনার পর কয়েকটি অংশ আলাদা করে নিয়ে যান। এরপর বাড়িতে পাকা ভিটের ওপর খুঁটি পুঁতে অংশগুলো জোড়া লাগালেই তা বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠে।

সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.