সিরাজদিখানে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ

নাছির উদ্দিন: মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের খসকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠে।

বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক বরাবর টাকা আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ ও অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি লিয়াকত আলী সরকারসহ শিক্ষক ও কর্মচারীরা।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সিদ্দিকুর রহমানকে বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভায় উপস্থাপন করতে বললেও সেটি দিন উপস্থাপন করেননি। বিদ্যালয়ের ক্যাশ বুক, দৈনিক আয়-ব্যয়ের ক্যাশবুক এবং শিক্ষকদের বেতন রেজিষ্টার বুক বিধিমোতাবেক অনুসরন করেন নাই। দায়িত্ব অবহেলা ও আর্থিক অনিয়মের ও চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঘুষ গ্রহণসহ মোট ১০টি অভিযোগ উল্লেখ করা হয় এর বিরুদ্ধে । অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি প্রধান শিক্ষককে পরপর তিনটি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও তিনি কোন উত্তর দিতে না পাড়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিধিবহির্ভূত ভাবে ভাউচার অনুমোদন ছাড়াই বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে অর্থগ্রহণ করেন তিনি। বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেনির কর্মচারী খালেদা আক্তারের কাছ থেকে তার ছেলেকে বিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেনির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিবেন মর্মে তার কাছ থেকে ১ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন। তিনি অত্র বিদ্যালয়ের সভার কার্যবিবরণী বহিঃ তে অধিকাংশ সভায় সভাপতিকে অনুপস্থিত দেখিয়ে সভা পরিচালনা করেন। একাডেমিক উন্নয়ন না করে এবং কম্পিউটার মেরামতের ভুয়া ভাউচার বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে। ২০১০ সালের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের স্কুল প্রদত্ত বেতন গ্রহণ বেতন বইতে স্বাক্ষর করলেও পরবর্তীতে তিনি পুনরায় ২০২০সালের ১৬ই মার্চ বকেয়া বেতনের নামে ভাউচার প্রদান করে অর্থগ্রহন করে। ২০২০ সালের ১২ই মে বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনিতে শাখা খোলা বাবদ ৫০ হাজার টাকা ভাউচার প্রদান করে বিদ্যালয় তহবিল হতে অর্থ গ্রহণ করেছেন অথচ অত্র বিদ্যালয়ে ২০১২ সাল থেকে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেনীতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে শাখা চলমান আছে এমনকি উল্লেখিত শাখায় ফরিদা ইয়াসমিন নামে একজন শাখা শিক্ষকের এমপিও করানো আছে। হাবিবুল্লাহ নামক একজন শিক্ষককে ধার পরিশোধ নামে সাদা কাগজে ২০ হাজার টাকার ভাউচার জমা দিয়ে অর্থ গ্রহণ করে এবং বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগ অনুমোদনের জন্য ব্যয় বাবদ সাদা কাগজে ৩২ হাজার টাকার ভাউচার প্রদান করে। এছাড়া বিভিন্ন ভাউচারের মাধ্যমে তিনি বিদ্যালয় থেকে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার আত্মসাৎ করে।

ভুক্তভোগী খালেদা বেগম বলেন, আমি বিদ্যালয়ের কাজ করি। হেডমাস্টার আমার ছেলেকে পিয়নের চাকরি দেবে বলে আমার থেকে এত লক্ষ টাকা নেয়। পরবর্তীতে সে চাকরি না দেওয়ার আমি তার বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিত দিলে। সে টাকা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কাছে জমা রাখছে আমি এখনো হাতে টাকা পাইনি।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগের কারনে ম্যানেজিং কমিটি তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। বিষয়টি তারা বসে হয়তো সমাধান করে ফেলবে। ঘুষের টাকা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন টাকা এখন জমা রয়েছে এবিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি বিদ্যালয়ে যোগদান করার পর বিদ্যালয় প্রায় ৩ কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক কাজ করিয়েছি। এতে টাকাপয়সা কিছুটা গরমিল হতে পারে বিদ্যালয় যদি আমার কাছে টাকা পায় সেটা ফেরত দিয়ে দিব। ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দম্ভ করে বলেন টাকা আমি নেইনি আমার এক অফিস সহকারি নিয়েছিল আমি সে টাকা উদ্ধার করেছি।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি লিয়াকত আলী সরকার বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫লক্ষ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি কিছুটা স্বীকার করেছেন এবং ২দিন সময় চেয়েছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী আব্দুল ওয়াহিদ মোহাম্মদ সালেহ বলেন এ বিষয়ে আমি শুনেছি। আমার কাছে কোন লিখিত কাগজ আসেনি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.