মুন্সীগঞ্জের চরাঞ্চলে সংঘর্ষ বাধলেই অস্ত্রের মহড়া, জনমনে আতঙ্ক

মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার চরাঞ্চলের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের সংঘর্ষ বাধলেই দেখা যায় দুর্বৃত্তদের অস্ত্রের মহড়া। এতে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। সর্বশেষ গত শুক্রবার সকালে সংঘর্ষের ঘটনায়ও একটি পক্ষ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ নানা প্রকার দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালায়।

জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গেল এক যুগে বর্তমান চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী ও সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনার মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে অনেকবার। এ ইউনিয়নের আমঘাটা, কংশপুরা, নোয়াদ্দা, রাজারচর, মাকহাটি, চরডুমুরিয়া, আনন্দপুর-প্রভৃতি গ্রামগুলোতে ওই দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয় সবচেয়ে বেশি। আর ওই সব সংঘর্ষে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের পাশাপাশি ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে ব্যাপক পরিমাণ। সংঘর্ষ হওয়ার পর পুলিশের অভিযান কম হয়নি। তবে পুলিশ প্রায়শ ককটেল উদ্ধার করে থাকলেও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে।

মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারী জানান, শুক্রবার ভোরে পূর্ব মাকহাটি গ্রামে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার লাভলী আক্তারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে। পরে সদর উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক খাইরুদ্দিন মোল্লার বাড়িতেও ভাঙচুর করে। তারা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করেছে এটাই তাদের দোষ। তাই তাদের বাড়িতে এ হামলা চালিয়েছে আমার প্রতিপক্ষ মহসিনা হক কল্পনার লোকজন। তারা এলাকায় প্রভাব বিস্তার ও নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য এবং আমাকে কোণঠাসা করার জন্য পাঁয়তারা করছে।

তিনি আরও জানান, মুক্তারপুরে পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় আসামি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতাউর রহমান মল্লিক ও সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সাজ্জাদুর রহমান জনি মল্লিকের নেতৃত্বে দলবল নিয়ে ভাঙচুর চালায় মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপি যুবদলের সহ-সভাপতি মিল্টন মল্লিক।

মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনা জানান, তারা আমার সমর্থক। আমি তো আর গ্রামে যাই না। রাজনীতি ছাইড়া দিয়া আইসা পরছি। আওয়ামী লীগ করে কতদিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাইরে থাকবে। কংসুপুরা, রাজারচর, মাকহাটি গ্রামের লোকজন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরেই গ্রাম ছাড়া। গ্রামে উঠায় ৭টি গ্রামের লোকজন মিলে তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে গ্রাম থেকে বের করে দেয়। আমার বাবা-মা কেউই বাড়িতে নেই। সেখানে গিয়েও তারা ককটেল মেরেছে।

অস্ত্রসহ ছবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে প্রতিবেদককে জানান, শুনলাম বর্তমান চেয়ারম্যান রিপনের লোক উজির আলী ও আওলাদ মোল্লা ককটেল বানাইতে এক মণ পাউডার আনতে অর্থ দিয়েছে। এই যে ঘোষণা দিয়ে ককটেল বানাইতাছে তারা কাদের খুন করবে। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

সাবেক চেয়ারম্যান মহসিনা হক কল্পনার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উজির আলী বলেন, আমরা তো গ্রামে যেতে পারি না। ঢাকায় বসবাস করি। আমাদের পক্ষে কি সম্ভব ৪০ কেজি বারুদ দিয়ে ককটেল বানানো? এটা সাবেক চেয়ারম্যানের মিথ্যা বয়ান। নিজের দোষ অন্যের ওপর চাপানো ছাড়া আর কিছুই না।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর থেকেই জেলা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা যাচাই-বাছাই করছে। ইতোমধ্যে আমরা ছবি ও নাম ঠিকানা পেয়েছি। আমরা খুব শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসব।

এনটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.