বিতর্কের মধ্যেই শিনজো আবের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন

রাহমান মনি : জাপান জুড়ে বিতর্কের মধ্যেই টোকিওতে শিনজো আবের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে । ২১৮টি দেশ, অঞ্চল, গণমাধ্যম কর্মী ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ৭০০জন বিদেশী অতিথি সহ প্রায় ৪,৩০০ জন শিনজো আবের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিল ।

উল্লেখযোগ্য বিদেশী অতিথিদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এন্টোনি আলবানিজ , ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং দক্ষিন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।

আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ২ টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র চিয়োদা সিটিতে জাপান জাতীয় হল ‘নিপ্পোন বুদোকান’-এ শিনজো আবের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর পর দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনের মাধ্যমে তার প্রতি সন্মান জানানো হয় । এরপর বড় পর্দায় আবের জীবনীর একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রদর্শন করা হয় । চিত্রে আবের শৈশব , কৈশোর , শিক্ষাজীবন , রাজনৈতিক ক্যারিয়ার , প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ইত্যাদি স্থান পায়।

শেষকৃত্য আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা , হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার হিরোয়ুকি হোসোদা, হাউজ অব কাউন্সিলর প্রেসিডেন্ট হিদেহিসা অতসুজি ,এবং জাপান সুপ্রিম কোর্ট-এর প্রধান বিচারপতি সাবুরো তোকুরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন । এছাড়াও আবের রাজনৈতিক সতীর্থদের মধ্য থেকে তাঁর দীর্ঘদিনের সহচর , প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বক্তব্য রাখেন ।

শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে আবের স্ত্রী আকি , ছোটভাই প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নোবুও , ক্রাউন প্রিন্স আকিশিনো এবং ইমপেরিয়াল পরিবারের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। প্রথা অনুযায়ী সম্রাট নারুহিতো এবং সম্রাজ্ঞী মাসাকো, সম্রাট ইমেরিটাস আকিহিতো এবং সম্রাজ্ঞী ইমেরিতা মিচিকো’র পক্ষ থেকে তাদের প্রতিনিধিরা অংশ গ্রহন করেন ।

এর আগে শিবুয়া ওয়ার্ডের তোমিগায়া আবের ভস্ম বহনকারী গাড়ী তাঁর বাড়ি ছেড়ে যাবার প্রাক্ক্যালে ‘সেলফ ডিফেন্স’ সদস্যরা একটি “গার্ড অফ অনার” প্রদান করে ।

এছাড়াও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে, হলের কাছে অবস্থিত কুদানজাকা কোয়েন পার্কে খোলা স্ট্যান্ডে সাধারন মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নিদিষ্ট স্থান রাখা হয় ।

সকালের এক পর্যায়ে অপেক্ষাকৃত মানুষের লাইন ১.৭ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হয়, যার ফলে আয়োজকরা সকাল ১০টার নির্ধারিত সময়ের পরিবর্তে সকাল সাড়ে ৯টায় ফুল গ্রহণ শুরু করেন।

দুটি স্ট্যান্ড ছিল, প্রতিটিতে চন্দ্রমল্লিকা এবং অন্যান্য ফুল দিয়ে ঘেরা আবের ছবি। দর্শনার্থীরা একটি নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যান, তারপরে স্ট্যান্ডে ফুল রেখে প্রার্থনা করেন। কেউ কেউ চোখের জল ফেলে। বিকেল ৪ টা পর্যন্ত তা খোলা থাকে।

যদিও একটি নাগরিক গোষ্ঠী টোকিওর চিয়োদা ওয়ার্ডের একটি পার্কে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বিরোধিতা করার জন্য একটি সমাবেশ করেছে, দাবি করেছে যে এটি রাখার দরকার নেই।

রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন নিশ্চিত করার জন্য রাজধানী জুরে অতিরিক্ত ২০,০০০ পুলিশ অফিসার নিয়োজিত ছিল ।

রাজধানীর চিয়োদা ওয়ার্ডের নিপ্পোন বুডোকান হল – এবং রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে পুলিশকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার স্থান ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যে রাখা হয়েছিল।

উল্লেখ্য গত ৮ জুলাই নারাতে উচ্চকক্ষ নির্বাচনের প্রচারে বক্তৃতা দেওয়ার সময় আবেকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

আবে হলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রধানমন্ত্রী যাকে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেওয়া হয়েছে, দীর্ঘ ৫৫ বছর আগে একই সম্মান শিগেরু ইয়োশিদাকে দেওয়া হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.