৪ শতাংশ জমিতে বসবাস করতেন জাহাঙ্গীর ও ইমরান হোসেন নামে দুই ভাই। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে খালের পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে গেছে তাদের বসতভিটা। ইমরানের অন্যের বাড়িতে ঠাঁই হলেও মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তানকে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটছে জাহাঙ্গীরের।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর প্রতিবেশী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায় চকি পেতে খোলা আকাশের নিচে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবারের ওপর ভরসা করে দিন কাটছে তাদের।
জাহাঙ্গীরের মা তাসলিমা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমাদের জায়গা নেই, বাড়ি নেই। আমরা এখন অনেক অসহায় হয়ে পড়ে আছি। কোথায় যাব জানি না।
জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুপা বেগম বলেন, আমাদের ৪ শতাংশ জায়গায় বাড়ি ছিল। ভাইঙ্গা গেছে গা। বাড়িঘর সব ভাইঙ্গা গেছে। কোথাও যাওয়ার মতো জায়গা নেই। খাওন বলতে কিছু নেই। গাছতলায় বসে থাকি। প্রতিবেশীরা ভাত দিয়ে যায়। তারা দিলে খাওয়া হয়, না দিলে না খেয়ে থাকি।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ৭ দিন ধরে আমাদের ঘর ভাইঙ্গা গেছে। পরে প্রতিবেশী এক ভাইয়ের এখানে চকি পেতে আপতত থাকা শুরু করছি। আমাদের থাকার কোনো জায়গা নাই। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। রাইতে খোলা আকাশের নিচে বাচ্চা লইয়া থাকতে কষ্ট হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কাইচাইল গ্রামে তীব্র ভাঙন চলছে। ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তালতলী-গৌরগঞ্জ খালে তীব্র স্রোত বইছে। আর স্রোতের মধ্যেই চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেড। স্রোত আর বাল্কহেডে উৎপন্ন ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা। ইতোমধ্যে ওই গ্রামের ১৫টি পরিবারের ৩৩টি বসতভিটা খালের মধ্যে বিলীন হয়ে গেছে।
তালতলা গৌরগঞ্জ খালটি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গৌরগঞ্জ এলাকার পদ্মা নদী থেকে পাশের টঙ্গিবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলা হয়ে সিরাজদিখান উপজেলার তালতলা এলাকার ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও খালটি মরা খালের মতো থাকলেও অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে এ খাল হতে মাটি কাটায় এবং খাল দিয়ে অসংখ্য বাল্কহেড চলায় কয়েক বছর ধরে লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে।
গত বছর টঙ্গিবাড়ী উপজেলার ছিলিমপুর এলাকার বেশ কিছু বসতভিটা এই খালে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর ছিলিমপুরের পাশের গ্রাম কাইচাইলে ভাঙন চলছে। এলাকবাসীর অভিযোগ, খাল থেকে অবৈধভাবে বালু কর্তন আর অবাধে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের কারণে ভাঙন শুরু হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত কয়েক দিনে কাইচাইল গ্রামের মনির হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, ইমরান খান, মোতালেব বেপারী, শাহআলম, আলমগীর, জাহাঙ্গীর, হাসমত আলী বেপারী, খালেক শেখ, বারেক শেখ, আব্দুল মালেক শেখ, সানাউল্লাহ বেপারী, আহসান উল্লাহ বেপারী, জসিম বেপারীসহ ৩৩ জনের বসতভিটা খালে বিলীন হয়ে গেছে।
ওই এলাকার হাসমত আলী বেপারীর স্ত্রী সালেহা বেগম (৭৫) ঘরের দরজায় বসে বিলাপ করছিলেন। পাশেই চলছে তার ছেলে আলমগীরের পাকা ভবন ভাঙন। এর আগে খালের ভাঙনে বিলীন হয়েছে তার অন্য তিন ছেলে জাহাঙ্গীর, মোতালেব ও শাহ আলমের বসতভিটা। তিনি বলেন, বিয়ের পর স্বামী আমারে এই বাড়িতে এনে তুলছে। আজ সেই বাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। আমার ছেলে-নাতিদের নিয়ে কোথায় যাব?
ইউপি সদস্য নবী হোসেন বলেন, খালের ওপারে সম্রাট কোল্ডস্টোর রয়েছে। সম্রাট কোল্ডস্টোরের মালিকরা খালে ড্রেজার বসিয়ে মাটি কেটে নিয়ে গেছে। এতে এপারে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. রাশেদুজ্জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ওই এলাকার চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটা তালিকা পেয়েছি। ভাঙন চলমান রয়েছে। সরকারিভাবে নদীভাঙন কবলিতদের যে ধরনের সহায়তা পাওয়ার কথা তার সব ব্যবস্থা আমরা করব। একটি পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে বিষয়টি জানা নেই। আমি ওই পরিবারের জন্য অবশ্যই থাকার ব্যবস্থা করব।
ব.ম শামীম/এসপি
Leave a Reply