মুন্সীগঞ্জে উৎপাদিত বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। গুণগতমান ভালো হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী। বীজ রোপণের মাত্র ২২ দিনে এসব চারা বিক্রয়যোগ্য হয়। আর অল্প সময়ে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় কৃষকও দিন দিন ঝুঁকছেন চারা উৎপাদনে।
চারা চাষিরা বলেন, মুন্সীগঞ্জে উৎপাদিত চারার বীজ মূলত জাপান এবং চীন থেকে আসে। এসব বীজের কেজি ৪০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। উৎকৃষ্ট বীজ থেকে চারা উৎপাদন করায় চারার মান অনেক ভালো হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার কেপিরবাগ, ভট্টাচার্যের বাগ, দেওয়ানবাজার, রামসিং, কালচি পাড়া, দেওসার , রামপাল, ধলাগাঁও, সিপাহিপাড়াসহ টঙ্গীবাড়ী উপজেলার পাইকপাড়া, আবদুল্লাহপুর, সোনারং এবং টঙ্গীবাড়ী ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় চারা উৎপাদিত হয়ে থাকে।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সবজি চারা উৎপাদনে মুন্সীগঞ্জ দেশের মধ্যে প্রসিদ্ধ। এখানে উৎপাদিত চারা অন্য সব জেলার চেয়ে ভালো। মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় শীতকালীন লাউ, কুমড়া, মরিচ, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলির চারা উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি বছর এসব চারা বিক্রি হচ্ছে কয়েক কোটি টাকায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশে উঁচু জমিতে বীজতলা বানিয়ে সবজির চারা আবাদ করা হয়েছে। চারাগুলো রোদ, বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য উপরে বাঁশের চাটাই দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এসব চারা প্রখর রোদ থেকে রক্ষার জন্য সকালে ঢেকে দেওয়া হয় আবার বৃষ্টি হলেও ঢেকে রাখা হয়। বর্তমানে পুরোদমে চারা বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতি বছর আগস্টের মাঝামাঝি চারা উৎপাদন মৌসুম শুরু হয় যা ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে। বীজ বোনা থেকে ২২ দিনের মধ্যে চারা বিক্রি শুরু হয়। প্রতি হাজার চারা এখন ১২০০-১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মৌসুমে এক একটি বীজতলায় ৩-৪ বার চারা উৎপাদন করা হয়।
কেবিবাগ দেওয়ানবাজার এলাকার চারা চাষি খলিল জানান, তিনি বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, টমেটো, কালোকপির চারা চাষ করেছেন। ৩৫ শতাংশ জমিতে এসব চাষ করতে তার ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি। এসব চারা মূলত ঢাকার সাভার, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা ও মানিকগঞ্জের লোকজন এসে চারা কিনে নিয়ে যায়।
চারা চাষি হারুন রশিদ বলেন, এবার ৪০ শতাংশ জমিতে চারা চাষ করেছি। এতে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে । ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করছি। আশা করছি সাত-আট লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। এতে খরচ বাদ দিয়ে দুই-তিন লাখ টাকার মতাে লাভ থাকবে। গত বছর ২-২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লাভ করছিলাম। এবারও আশা করছি ভালো লাভ করতে পারব।
সোহেল নামে আরেক চারা চাষি বলেন, চারা চাষে অনেক লাভ। যদি ভালোমতো ফলন ফলাইতে পারি তাহলে ভালো লাভ হয়। অল্প সময়ে অনেক টাকা পুঁজি পাওয়া যায়।
আমির হোসেন ঢালী বলেন, ৫০ শতাংশ জমিতে এবার ফুলকপি, বাঁধাকপির চারা লাগাইছি। এতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। আশা করছি আরও ৬-৭ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারব। এতে আমার প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভ হবে।
মো. আক্কাশ বলেন, রোদ-বৃষ্টিতে বীজতলা ঢেকে দিতে হয়। সকালে হালকা রোদ খাওয়াতে হয় আর বৃষ্টিতে গোড়ার মাটি চলে গেলে নতুন মাটি দিতে হয়।
মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, মুন্সীগঞ্জের শীতকালীন সবজি চাষ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে ব্যাপক চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এসব চারার গুণগত মান ভালো হওয়ায় তা জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে।
ব.ম শামীম/এসপি
Leave a Reply