ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে মুন্সিগঞ্জের পদ্মা পাড়ের মানুষের

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আবারো মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মায় দেখা দিয়েছে ভাঙন, এর আগে টানা এক মাস ধরে চলা ভাঙন তাণ্ডবে বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হারিয়ে, আশ্রয়হীন প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের সিন্ডিকেটের, অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রভাবেই বেড়েছে ভাঙনে তীব্রতা।

একদিকে পদ্মার ভাঙন অন্যদিকে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার নদী তীরবর্তী ভাঙন কবলিত মানুষের। ফলে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে সেখানকার প্রতিটি পরিবারের, বসতভিটা আর বেঁচে থাকার শেষ সম্বল হারিয়ে আশ্রয়হীন প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার।

ভাঙন কবলিতরা বলছে দিনের পর দিন পদ্মায় বালু উত্তোলনের মহোৎসব চললেও নির্বিকার ছিল প্রশাসন। বুধবার (২৬ অক্টোবর) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার লৌহজং তেউটিয়া ও বেজগাঁও ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম পড়েছে ভাঙনের কবলে। অসময়ে হঠাৎ পদ্মার আকস্মিক ভাঙন তাণ্ডবে, গত একমাস ধরে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে স্থানীয়দের বসতভিটাসহ বিভিন্ন গাছপালা।

এরই মধ্যে ভাঙন আতঙ্কে প্রায় অর্ধশতাধিক ঘর বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিয়েছে স্থানীয়রা। এত আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে ওই এলাকার প্রায় বেশ কয়েকটি পরিবার।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দলের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দিনের-পর-দিন, নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের নৈরাজ্য চালালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে চলতি বছরের গত জুলাই মাসের ৪ তারিখে (লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ীতে) অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিতভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়। তবুও কেন, কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন এমন প্রশ্ন তাদেরও।

পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে গেলো বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে চলছে বালু উত্তোলন। পদ্মা সেতু থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরেই বালু উত্তোলনের এমন মহোৎসব চললেও নেয়া হয়নি স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ। তবে শুরু থেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়েছে জানায় স্থানীয়রা।

এদিকে ভাঙন ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধে চেষ্টা চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবুও শেষ রক্ষা হচ্ছে না অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্তদের। ফলে দ্রুত এর স্থায়ী সমাধান চান তারা।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা না গেলে। ভাঙন ঠেকাতে নেয়া ব্যবস্থা কোনো কাজেই আসবে না বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী।

তিনি আরও জানান, লৌহজংয়ের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে চলছে পদ্মার ভাঙন মাত্র একমাসের ব্যবধানে অসময়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা এতে ভেঙে পড়েছে গ্রামগুলোতে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে বেশ এলাকা তবুও ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো খোঁজ নেয়নি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এছাড়াও ফের ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে কুমারভোগ, মেদিনীমণ্ডল, গাঁওদিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন।

সরেজমিনে ঘুরে আরও দেখা যায় ও ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, পদ্মার, নদীতীরবর্তী এলাকায় বাঁধ নির্মাণ কাজ চলার মধ্যেই উপজেলার বেজগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তীব্র নদী ভাঙন দেখা দেয়। গত এক সপ্তাহে সুন্দিসার বেজগাঁও ও বেগের বাড়ি এলাকার প্রায় ৬০০ মিটার এলাকা পদ্মারগর্ভে বিলীন হয়েছে। ৭০/৮০ মিটারের মধ্যে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে সুন্দিসার মসজিদ ও মাদরাসা।

ভাঙন ঠেকাতে শত শত বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। এতে পদ্মাপাড়ের মানুষের মাঝে ভাঙন-আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, নদীতে প্রবল স্রোত, ঢেউয়ের আঘাত ও অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন এ ভাঙনের কারণ।

এর আগে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নওপাড়ায় পদ্মার ভাঙনে ৩ দিনে নয়টি বাড়ি বিলীন হয়ে যায়। তারও আগে মে মাসে সিংহেরহাটি গ্রামের ৫০০ মিটার এলাকা নদী ভাঙনে তলিয়ে যায়।

উপজেলার সুন্দিসার বেজগাঁও, বড়ো নওপাড়া ও সিংহেরহাটি গ্রাম তিনটি বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের বাইরে রয়েছে।

এলাকা দুটি হচ্ছে- নদীতে উত্তাল ঢেউ আর প্রবল স্রোতের কারণে ভাঙনের মুখে পড়েছে পদ্মা নদীঘেঁষা লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের বড় নওপাড়া গ্রাম। ৩ দিনে গ্রামটির ১৫০ মিটার এলাকার নয়টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে সরে গেছেন নিরাপদ স্থানে।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বেজগাঁও ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুন্দিসার এলাকার প্রায় ৭০ মিটার জমি হঠাৎ নদীতে ধসে পড়েছে। এর ঠিক ৭০/৮০ মিটার এলাকার মধ্যে রয়েছে সুন্দিসার মাদরাসা ও মসজিদ।

দিনেরাতে অনিয়ন্ত্রিত বালু উত্তোলন এবং বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচলে উত্তাল ঢেউয়ের কারণে এসব এলাকায় ভাঙন চলছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ।

গত শনিবার সকালে কুতুব মোল্লা, মামুন মোল্লা ও মিঠু মোল্লাসহ আরও বেশ কয়েকজনের প্রায় শত বছরের পুরনো ভিটেবাড়ি পদ্মার গর্ভে চলে গেছে। পরে তড়িঘড়ি করে ঘর ভেঙে অন্য স্থানে সরিয়ে রেখেছেন।

এছাড়াও লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বড় নওপাড়া গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদীর পাড়ের মানুষের। এলাকাবাসী জানান, এর আগে স্থানীয়দের উদ্যোগে ৫০ হাজার টাকার খরচ করে বাঁশ-খুঁটি ও বালুভর্তি ব্যাগ ফেলে ভাঙন থেকে বাড়িঘর রক্ষার চেষ্টা চালিয়েছে। তবুও ভাঙন রোধ করা যায়নি। এতে এলাকার আশপাশের মানুষের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

তাদের প্রতিবেশী নয়ন ঘোষ, রিপন শেখসহ অর্ধ শতাধিক পরিবার ঘরের আসবাবপত্র গুছিয়ে রেখেছেন। ভাঙনের মাত্রা বেড়ে গেলে ঘর ভেঙে অন্যত্র চলে যাবেন। কেউ কেউ আবার আসবাবপত্র কাছের আত্মীয়ের বাসায় রেখে এসেছেন।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায়, খবর পেয়ে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন ঘুরে দেখেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল। তিনি জানান, ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তার
সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুত ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হবে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুলোতে।

চলতি বছরের ১৮ মে উপজেলার শামুরবাড়ি ও হাড়িদিয়া গ্রামে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পদ্মা নদীর ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উপজেলাবাসী যখন আশায় বুক বাঁধছেন, ঠিক তখনই হঠাৎ নদীভাঙন দেখা দেওয়ায় আবার হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত পদ্মার বাম তীর ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকায় ৪৪৬ কোটি টাকার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

খড়িয়া থেকে দিঘিরপাড় পর্যন্ত এলাকার দূরত্ব ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ হলেও শুধু ভাঙন প্রবণ ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু তেউটিয়া ইউনিয়নের বড়নওপাড়া গ্রামের ভাঙন কবলিত এলাকাটি ভাঙন প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত না। তবে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার সব প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় জরিপ চালায়। তখন লৌহজং উপজেলার খড়িয়া থেকে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দিঘিরপাড় পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকা ভাঙনপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য ৭৫০ কোটি টাকা খরচ লাগবে বলে সরকারের কাছে সুপারিশ করে। কিন্তু সরকারের পক্ষ বিপুল পরিমাণ এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয় বলে বেশি ভাঙনপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার লক্ষ্যে পাউবোকে পুনরায় জরিপের নির্দেশ দেয়া হয়।

এরপর পাউবো ১৩ কিলোমিটার এলাকা থেকে ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলাকাকে অতিমাত্রায় ভাঙনপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু এ বছরের বর্ষা মৌসুমের প্রথম দিকেই কম ভাঙনপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত ৪ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে নদী তীরবর্তী মানুষ। সে সময় লৌহজং উপজেলার সিংহেরহাটি ও বড় নওপাড়া গ্রামে ভাঙন দেখা দিলে তাৎক্ষণিক জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙনরোধ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

উপজেলার সিংহেরহাটি গ্রামের শহিদুল ইসলাম বেপারী, দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামের কামাল টেপা ও বেজগাঁও গ্রামের রাসেল হোসেন নিরব মনে করেন- ৪ কিলোমিটার বাদ না দিয়ে পুরো ১৩ কিলোমিটার এলাকা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আওতায় আনা হলে আজ এমন ভাঙনের শিকার হতো না উপজেলা বাসীর।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মনে করছে, ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেও ভাঙন ঠেকানো যাবে না, যদি নদীতে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। কারণ এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পদ্মা জনপদে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শঙ্কর বিস্তারিতভাবে আরও জানান, পদ্মা নদী থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ৪ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে প্রকল্প এলাকার ভেতর টংগিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়নের চৌষাড়া ও মিতারা এলাকায় এবং হাসাইল ইউনিয়নের পূর্ব হাসাইল এলাকায় ও হাসাইল বাজারের পশ্চিমে অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে। এভাবে অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলন হতে থাকলে প্রকল্প হতে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না। ফলে সরকারি অর্থের অপচয় হওয়াসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

চিঠিতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ১৫ (২) অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার করার মাধ্যমে অবৈধ এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে চলতি বর্ষা মৌসুমে লৌহজং উপজেলা প্রশাসন কয়েক দফা নদীতে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে বেশ কিছু বাল্কহেড মালিককে জরিমানা করে। কিন্তু এ অভিযান ও জরিমানা যথেষ্ট ছিল না বলে মনে করেন স্থানীয়রা। কারণ, প্রতিদিন হাজার হাজার বাল্কহেড পদ্মা সেতুর ভাটিতে ও উজানে গিয়ে নির্বিঘ্নে বালু উত্তোলন করেছে। এত বড় নদীতে হাজার হাজার বাল্কহেড চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা শুধু লৌহজং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব ছিল না।

সিংহেরহাটি গ্রামের বাসিন্দা গাজী শাহাবুদ্দিন, জসিমউদ্দিন মোল্লা জানান, রাত গভীর হলেই কাটার মেশিন (খননযন্ত্র) দিয়ে পদ্মা থেকে বালু তুলে নিচ্ছে দস্যুরা। নদীর তীর থেকে মাত্র ২০০/৩০০ মিটার দূরত্ব থেকে এ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ঝাউটিয়া গ্রামের নদীর তীরঘেঁষা বাড়ি বরুণ দাস, প্রদীপ দাস, বিনয় কুমার মালো জানান, প্রতিদিন শত শত বাল্কহেড পাড় ঘেঁষে চলাচল করায় ঢেউয়ের আঘাতে নদী ভাঙছে। এর ফলে বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি জানিয়েছেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। কারণ, এই অবৈধ বালু উত্তোলনে কারণে আবার নদী ভাঙন দেখা দিলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কিছু থাকবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ব্যবস্থায় লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা বাসীর জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙনের স্থায়ী সমাধান হবে- এমনটাই ভেবে আসছে দুই উপজেলার মানুষ।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল জানান, পদ্মায় বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ঘন ঘন অভিযান চলছে। তবে লোকবল সংকটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না, এছাড়াও পদ্মার উভয় প্রান্তে বালু কাটা হচ্ছে পদ্মার বিশেষ করে মাদারীপুর ও শরীয়তপুর এলাকায়। তবে সেই দুই জেলার প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। হয়তো শিগগিরই তারা ওই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত দুইদিন ধরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা। ফলে তড়িঘড়ি করে ভাঙ্গন ঠেকাতে দ্রুত বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ব্যবস্থা নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

উল্লেখ: চলতি বছরের পদ্মা ভাঙনে মুন্সিগঞ্জ সদরের বাংলা বাজার ও টঙ্গীবাড়ী এবং লৌহজং উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৩০০টি পরিবারের বসতভিটা বিভিন্ন গাছপালাসহ কৃষি জমি।

চ্যানেল২৪ টিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.