গাড়ি নেই মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌরুটে, ফেরিতে ক্রিকেট খেলছেন স্টাফরা

মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌরুটে দ্বিতীয়বারের মতো ফেরি চলাচল শুরু হলেও এখনো অলস বসে আছে ফেরিগুলো। গত ৯ নভেম্বর থেকে এ রুটে চলাচলের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে তিনটি ফেরি- স্বর্ণচাপা, সন্ধ্যামালতী ও কর্ণফুলী। কিন্তু ফেরিঘাটে গাড়ি না আসায় ফেরিগুলো অলস সময় কাটাচ্ছে। বুধবার (১৬ নভেম্বর) সময় পার করতে ফেরির ওপরে ক্রিকেট খেলছেন স্টাফরা। বুধবার (১৬ নভেম্বর) ফেরিঘাটে এমনি দৃশ্য দেখা যায়।

প্রচারণার অভাবে এ রুটে গাড়ি আসছে না বলে দাবি স্থানীয়দের। ফেরি চালকরা বলেন, গত সাত দিনে ১১টি ছোট গাড়ি এ রুট দিয়ে পারাপার হয়েছে। আমরা সর্বক্ষণ আশায় থাকি গাড়ি আসবে। কিন্তু গাড়ি না আসায় ফেরিতে অলস বসে থাকতে ভালো লাগে না। তাই ফেরির মধ্যে ক্রিকেট খেলছি।

গত ৯ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌপথে মেঘনা নদীতে ফেরি পারাপার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। এর আগে ২০১৮ সালের ৪ জুন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) নিজস্ব অর্থায়নে ২৯ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘স্বর্ণচাপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতি’ নামের ছোট দুটি ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়েছিল। তবে সে সময় ঘাটের দুই পাড়ের সরু ও খানাখন্দে ভরা সড়ক এবং যাত্রী ও পর্যাপ্ত যানবাহন না থাকায় উদ্বোধনের ছয় মাসের মধ্যে ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। পরে ওই দুই ফেরি আরিচা ঘাটে পাঠানো হয়।

এ বছর ফেরি উদ্বোধনের আগে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ভবেরচর হতে রসুলপুর খেয়াঘাট পর্যন্ত, গজারিয়া খেয়াঘাট হতে কাজিপুরা ফেরিঘাট পর্যন্ত এছাড়া নারায়নগঞ্জের চর কিশোরগঞ্জ ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার যোগনীঘাট এলাকা পর্যন্ত রাস্তা প্রশস্ত করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। কিন্তু মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার যোগনীঘাট হতে মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট পর্যন্ত এখানো সড়ক প্রশস্তকরণ না করায় ও ওই সড়কে খানাখন্দ থাকায় এ পথ হয়ে ফেরিঘাটে বড় গাড়ি যাতায়াতে ব্যঘাত ঘটছে। তাই এ পথে গাড়ি চালাচল কম হচ্ছে। অন্যদিকে এ রুটে ফেরি চলাচল শুরু হলেও এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা না থাকায় এ রুটে গাড়ি আসছে না বলে দাবি স্থানীয়দের।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জ-গজারিয়া নৌপথে ফেরি চালু হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলার সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার কমছে। পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সীগঞ্জ শহরের ভেতর দিয়ে এ রুটে মোংলা ও পায়রা বন্দরে সহজে যাতায়াত করা যাবে। দেড় কিলোমিটার দূরত্বের এ নৌপথে ফেরি পারাপারে সময় লাগবে ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। প্রতিটি ফেরির ধারণক্ষমতা ১০০ মেট্রিক টন।

এ ব্যাপারে টেঙ্গারচর এলাকার বাসিন্দা ইয়াকত আলী বলেন, আমরা মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা। অথচ মুন্সীগঞ্জের সাথে আমাদের গজারিয়ার সড়ক পথে কোনো সরাসরি যোগাযোগ নাই। মেঘনা নদী ট্রলারে পাড়ি দিয়ে সব সময় আমরা মুন্সীগঞ্জ শহরের সাথে যোগাযোগ করি। এর আগে একবার ফেরি চলাচল শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু চলাচলের কিছুদিন পরেই আবার বন্ধ হয়ে গেল। এখন আবার পুনরায় চালু হইছে। আমরা যেকোনো মূল্যে সব সময় এ ঘাটে ফেরি সচল চাই। তাহলে ঝড় দূর্যোগে যাতায়াতের সময় আমাদের আর ঝুঁকি থাকে না।

সালাউদ্দিন বলেন, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। চাকরির জন্য নিয়মিত মোটরসাইকেল চালাতে হয়। কিন্তু আমার বাড়ি গজারিয়া হতে সড়ক পথে সরাসরি গজারিয়ার সাথে মুন্সীগঞ্জ সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় মোটরসাইকেল মুন্সীগঞ্জ শহরে রেখে মেঘনা নদী দিয়ে ট্রলারে পারাপার হয়ে বাড়িতে আসা যাওয়া করি। আমার মতো আরও ৩ বন্ধু একইভাবে মুন্সীগঞ্জ শহরে মোটরসাইকেল রেখে বাড়িতে ট্রলার পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। কিছুদিন হলো ফেরি চালু হয়েছে। কিন্তু সারাদিনে গাড়ি না থাকায় ফেরি ছাড়ে না। আমরা চাই সরকার কিছুটা লোকসান মেনে নিয়ে হলেও এ রুটে নিয়মিত ফেরি চালু করলে আমরা উপকৃত হই।

গজারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য উপজেলার কাজিপুরা গ্রামের আব্দুল গাফফার বলেন, সরকার যদি লস দিয়ে হলেও কিছুদিন এরুটে ফেরিগুলো কিছুদিন চালাইতো তাহলে হয়তো ফেরি চলাচল সচল হতো। ফেরি উদ্বোধন করা হলো ঠিকই কিন্তু এ রুটে যে ফেরি চলাচল শুরু হইছে এ নিয়ে কোনো প্রচার-প্রচারণা নাই। রাস্তার মধ্যে কোন সাইনবোর্ডও দেওয়া হয় নাই। যার কারণে গাড়ি আসছে না। আমরা ফেরি নিয়মিত সচল রাখার পাশাপাশি প্রচার-প্রচারণার দাবি জানাই।

ফেরি স্বর্ণচাঁপার মাস্টার শাহিনুর ইসলাম বলেন, ফেরি চলাচল শুরু হওয়ার পর হতে গত সাত দিনে এ রুট দিয়ে ১১টি গাড়ি পারাপার হয়েছে। তাও সব ছোট গাড়ি। আমরা ফেরি নিয়ে সব সময় গাড়ি পারাপারে প্রস্তুত। কিন্তু এ ঘাট দিয়ে তেমন গাড়ি আসছে না। এ ঘাট দিয়ে প্রচুর যাত্রী পারাপার হয়। কিন্তু শুধু যাত্রী নিয়ে আমাদের ফেরি চলাচলের অনুমতি নেই। তারপরেও যদি কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয় আমরা শুধু যাত্রী নিয়ে ফেরি ছাড়ব।

এ ব্যাপারে গাজারিয়া ঘাটের (বিআইডব্লিউটিসির) ব্যবস্থাপক মো. সিহাব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ফেরি চালাইতে আমাদের অনেক জ্বালানি খরচ হয়। এখন আমাদের জ্বালানি খরচ গাড়ি থেকে না উঠলে ফেরি চালাইতে পারব না। তারপরেও জনস্বার্থে আমরা ফেরি চলাচল শুরু করছি। এ ফেরি চলাচলের আগে ফেরিঘাটের দু-পাশের রাস্তা প্রশস্ত করা হলেও মুন্সীগঞ্জ শহর হতে যোগনীঘাট পর্যন্ত সড়ক অনেক সরু। এটা আমি মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসককে অবহিত করেছি। তাছাড়া এ রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে সে বিষয়ে সড়কে কোনো সাইনবোর্ড বা নির্দেশিকা নেই। যার কারণে এদিক দিয়ে গাড়ি আসছে না। রাস্তায় তো আমরা সাইনবোর্ড দিতে পারি না। সাইনবোর্ড দেওয়ার দায়িত্ব সড়ক ও জনপদের।

মুন্সীগঞ্জ সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবুল কাশেম মোহাম্মদ নাহীন রেজা বলেন, চরকিশোরগঞ্জ হতে মুন্সীগঞ্জ যোগণীঘাট পর্যন্ত যে রাস্তা ওটা নারায়নগঞ্জ সড়ক ও জনপদ দেখে। ওই রাস্তাটি তারা প্রশস্তকরণ করেছে। বাকি যোগনীঘাট হতে মুন্সীগঞ্জ সুপার মার্কেট পর্যন্ত সড়কটি মুন্সীগঞ্জ পৌসভার।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সড়কের দু-পাশে অনেক স্থাপনা রয়েছে। ওগুলো ভাঙ্গতে পারলে সড়কটি প্রশস্তকরণ করা যেত। এ মুহুর্তে এ সড়কটি প্রশস্ত করার মতো অর্থ ও পরিকল্পনা আমাদের নেই।

ব.ম শামীম/আরকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.