মুন্সিগঞ্জের গণসদন হল দ্রুত সংস্কার করুন: নাট্যমঞ্চ যখন ‘ভুতুড়ে বাড়ি’

কালের পরিক্রমায় গ্রামীণ ও লোকজ ঐতিহ্যের অনেক চর্চাই হারিয়ে গেছে বা টিমটিম করে টিকে আছে এখনো। কিন্তু সাধারণ যে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা দেশজুড়ে ছিল, সেটির গণ্ডিও কি ছোট হয়ে যায়নি? বিশেষ করে জেলা-উপজেলাকেন্দ্রিক নাট্যচর্চার কথা বলতেই হয়।

নাটকের দলগুলোর নাট্য উৎসবও অনেক জায়গায় অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। স্মার্টফোনের যুগে এখনো বইয়ের আবেদন শেষ হয়ে যায়নি, ওটিটি প্ল্যাটফর্মের কারণে আবেদন কমেনি সিনেমা হলেরও। কিন্তু মঞ্চনাটক কেন দর্শক পাবে না? নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সেগুলো থেকে উত্তরণের জন্য কী করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা?

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আসলে কতটা পাওয়া যাচ্ছে কিংবা যে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে বা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো কতটা সুফল দিচ্ছে? মুন্সিগঞ্জের নাট্যচর্চার প্রধানতম কেন্দ্র গণসদন হলের দুরবস্থা দেখে নাট্যসচেতন যে কারও মধ্যে এমন প্রশ্ন তৈরি হবে।

এক থেকে দেড় যুগ আগেও দেশের অন্য অনেক জেলার মতো মুন্সিগঞ্জের নাট্যচর্চা ছিল চোখে পড়ার মতো। সেখানকার গণসদন হলে আয়োজিত হতো সপ্তাহব্যাপী নাট্য উৎসব। বিখ্যাত ও সুপরিচিত অনেক নাট্যশিল্পীই এখানে অভিনয় করতে আসতেন। সেই হলে নাটক দেখতেও শত শত দর্শকের লাইন লেগে যেত। এখন গণসদন হলটি দেখলে গৌরবোজ্জ্বল দিনগুলোর কথা অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবেন না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অবহেলার কারণে হলটি যেন এখন ‘ভুতুড়ে বাড়ি’। সদর থানার পশ্চিম পাশে অবস্থিত এই হল স্বাধীনতার আগে প্রশাসনিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পরে সত্তরের দশকের শেষের দিকে সেটিকে সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘গণসদন নাট্যমঞ্চ’ নাম দিয়ে সরকারিভাবে হলটির উদ্বোধনও করা হয়।

দু-এক দফা সংস্কারকাজও করা হয়। কিন্তু ২০০৭ সালে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে হলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর সেটি আর সংস্কার করা হয়নি। থেমে যায় নাট্যচর্চা। বন্ধ হয়ে যায় সব ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন। নাট্যকর্মীরাও হলটি নিয়ে হারিয়ে ফেলেন উৎসাহ-উদ্দীপনা।

মুন্সিগঞ্জ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুজন হায়দার বলেন, অযত্ন–অবহেলা ও সংস্কারের অভাবে গণসদন হলটি এখন জরাজীর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে আছে। সেটিকে পুনঃসংস্কার করে আধুনিক মিলনায়তন করার দাবি দীর্ঘদিনের।

অনেক আন্দোলন করেও কিছু হয়নি। মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল বলেন, হলটি সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আমরা তাঁর কথায় আস্থা রাখতে চাই। দ্রুত হলটি সংস্কার করে মুন্সিগঞ্জের নাট্যচর্চার সুদিন ফিরিয়ে আনা হোক।

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.