বিদ্যালয়ের ভেতরেই প্রকাশ্যে চলছে কোচিং বাণিজ্য

মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার বেতকা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রকাশ্যে চলছে কোচিং বাণিজ্য। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে এই কোচিং বাণিজ্য। এই কোচিং বাণিজ্যকে গত জুন মাস হতে বাধ্যতামূলক করা হলেও পরে ওই স্কুলের অভিভাবকদের চাপের মুখে পিছু হটে স্কুলের শিক্ষকরা।

তবে এখনো বিভিন্ন কৌশলে ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ওই বিদ্যালয়ের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এক হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদাভাবে সপ্তাহে ৩দিন করে কোচিং করানো হয়। দুটি বিষয়ে পড়ানোর জন্য মাসে নেওয়া হয় ৬শ টাকা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার ছাত্রীদের এবং সোম, বুধ ও বৃহস্পতিবার ছাত্রদের কোচিং করানো হচ্ছে। ভুক্তভোগী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ রোববার থেকে বুধবার ছাত্র-ছাত্রীদের আলাদাভাবে এবং বৃহস্পতিবার সকল ছাত্র-ছাত্রীদের একসাথে বসিয়ে এ কোচিং করাচ্ছেন শিক্ষকরা।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সকাল ৯টায় গিয়ে দেখা যায়, ওই বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের আটটি রুমে ১২ জন শিক্ষক কোচিং করাচ্ছেন। আটটি রুমে প্রায় ৪০০ ছাত্রী কোচিংয়ে পড়ছে। মঙ্গলবার সকালে শুধু ছাত্রীদের জন্য কোচিং এর দিন নির্ধারণ থাকায় শুধু ছাত্রীদেরই দেখা মেলে। স্কুলের গেটের বাইরে স্কুলে প্রবেশের অপেক্ষায় ভিড় জমিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছাত্ররা। স্কুলের গেট খোলা থাকলেও কোচিং চলায় ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না ছাত্রদের।

বিদ্যালয়ের চারজন খণ্ডকালীন শিক্ষক হলেন, শফিকুল ইসলাম, মহিউদ্দিন মাহিন, খাইরুল ইসলাম ও জিহাদ হাসান। স্থানীয় সূত্র জানায়, খণ্ডকালীন শিক্ষকদের চাহিদা কম থাকায় তাদের নামমাত্র কোচিং ফি দিয়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আল মামুন ও সহকারী শিক্ষক সেলিম মিয়া কোচিং করাচ্ছেন।

ওই স্কুলে প্রবেশের প্রতীক্ষায় থাকা ৮ম শ্রেণির ছাত্র সোহান বলেন, আমরা সপ্তাহে ৩ দিন কোচিং করি। আমাদের কাছ থেকে মাসে ৬০০ টাকা করে নেন শিক্ষকরা।

নবম শ্রেণির ছাত্র নিরব বলেন, স্কুলে কোচিং বাধ্যতামূলক। না করলে অভিভাবকদের ডাকায় স্যারেরা। একদিন ছেলেরা কোচিং করে একদিন মেয়েরা । আমাদের সোমবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার কোচিং করায় শিক্ষকরা।

৭ম শ্রেণির ছাত্রীর রেদোয়ানা বলেন, আমাদের সপ্তাহে ৩ দিন ২ বিষয়ে পড়ায় শিক্ষকরা। দুই সাবজেক্ট পড়ায় । এতে মাসে ৬০০ টাকা নেয় শিক্ষকরা।

৯ম শ্রেণির ছাত্র ইয়াসিন খান বলেন, তিন দিন ছেলে, তিন দিন মেয়েদের কোচিং হয়। এই স্কুলে পড়লে বাধ্যতামূলক কোচিং করতে হবে।

ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সেলিম হোসেন বলেন, স্কুলে ১০৩৭ জন শিক্ষর্ত্রী রয়েছে। সকলে কোচিং করে না। দুই বিষয়ে কোচিং করিয়ে মাসে ৬শ টাকা নেওয়া কথা হলেও যারা কোচিং করে তাদের মধ্যে অনেকে টাকা দেয় না আবার অনেকে দিলেও অর্ধেক দেয়।

এ ব্যপারে বেতকা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিউদ্দিন আল মামুন বলেন, করোনাকালীন বাচ্চারা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারেনি। তাদের সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য এই কোচিং এর ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন তেমন সাড়া পাচ্ছি না। ম্যানেজিং কমিটি সিদ্ধান্ত মতেই এই কোচিং চালু করা হয়েছিল।

ওই স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন শিদকার এর মুঠোফোনে ফোন করে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। পরে জানাগেছে ওনি দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন ।

এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটি সদস্য জনি শিকদার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুলে কোচিং চালু হওয়ার আগে শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াতেন। প্রাইভেট পরিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অনেক টাকা নিতো। কিন্তু গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের এত টাকা দিয়ে প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য না থাকায় পরে আমরা গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের বিষয়গুলো বিবেচনা করে স্কুলে অল্প বেতনে কোচিং করাতে বলি‌। যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষায় উন্নতি হয়।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খালেদা পারভীন বলেন, সরকারী বিধি বিধান মেনে প্রতি বিষয়ে ১৫০টাকা করে নিয়ে কোচিং করানো যাবে। তারা যদি বেশি নেয় এবং কোন নিয়ম অনুযায়ী কোচিং করাচ্ছে সেটা খোজঁ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব.ম শামীম/আরকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.