সিরাজদিখানে বালু ভরাট করে খালের প্রবাহ বন্ধ, হুমকিতে ফসল আবাদ

স্থানীয় সোলায়মান ইসলাম নামের এক প্রভাবশালী বালু ভরাটের এ কাজ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে নীরব স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন। খালটি দিয়ে একসময় নদী থেকে জোয়ার-ভাটার পানি আসত। বর্ষার পানির সঙ্গে পলি এসে বাড়ত জমির উর্বরতা। এ খাল বেয়েই সরত আশপাশের অতিরিক্ত পানি। খালটির ওপর নির্ভর করে প্রতিবছর তিন ফসলের আবাদ করতেন খালের দুই পাশের কয়েক শ কৃষক। সেই খালের একাংশে ১৫-২০ দিন আগে বালু ভরাট করে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার পূর্ব রাজদিয়া গ্রামে খালটির অবস্থান। স্থানীয় সোলায়মান ইসলাম নামের এক প্রভাবশালী বালুভরাটের এ কাজ করেছেন। তাঁর এমন কাণ্ডে হুমকিতে পড়েছে খালের দুই পাশের অনেক জমির আবাদ।

খালটির ওপর নির্ভরতার প্রসঙ্গ তুলতেই স্থানীয় পূর্ব রাজদিয়া গ্রামের কৃষক শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, ‘জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কৃষিকাজ করছি। জমিতে তিন পর্যায়ে আলু, শাকসবজি, ধান, পাটের চাষাবাদ করতাম। ফসল আবাদে রাজদিয়া খালটি আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল। খালে বালু ভরাট করায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হবে। বছরের অধিকাংশ সময় ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা থাকবে। এ বছরের পর থেকে হয়তো আর তিন ফসল করা যাবে না।’

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব রাজদিয়া গ্রাম দিয়ে প্রবাহিত খালটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এতে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে পানিপ্রবাহ। ভরাট করা অংশের মাটি ঠিকঠাক করে ভিটা বানাচ্ছেন পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা সবাই শ্রমিক। স্থানীয় সোলায়মান ইসলাম খালটি ভরাট করেছেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, ৩০-৩৫ ফুট চওড়া খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ কিলোমিটার। উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছামতী নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে পূর্ব রাজদিয়া, পশ্চিম রাজদিয়া ও ইছাপুরা দিয়ে পোরাগঙ্গা খালের সঙ্গে মিশেছে। আগে এ খাল দিয়ে নৌকায় করে গ্রামের মানুষজন যাতায়াত করতেন। পূর্ব রাজদিয়া, পশ্চিম রাজদিয়া বিলের অন্তত ২০০ একর তিন ফসলি কৃষিজমির চাষাবাদ এ খালের ওপর নির্ভরশীল।

খাল ভরাটকারী সোলায়মান ইসলাম স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। পানিপ্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করে খাল ভরাট করা হলেও জনপ্রতিনিধি, ভূমি অফিসের সবাই অজানা কারণে নীরব। তবে খালের ওই অংশ নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে সোলায়মান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি কোনো খাল ভরাট করেননি। যে জায়গা ভরাট করেছেন, সেটি তাঁর পৈতৃক সম্পত্তি। খালের ওপর রাস্তা বানানো হয়েছে। বেশি কিছু জানতে হলে ভূমি অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন সোলায়মান।

ইসাপুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, খাল কারও ব্যক্তিগত সম্পদ হতে পারে না। ব্যক্তিগত সম্পদ হলেও কৃষিজমি পানিনিষ্কাশনের জন্য খাল ভরাট করা উচিত নয়।

খাল ভরাট িনয়ে অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম আক্তার বলেন, রাজিয়া এলাকার কয়েক কৃষক অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে সার্ভেয়ার পাঠানো হয়েছে। যিনি খাল ভরাট করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.