মুন্সীগঞ্জে পদ্মায় অবাধে চলছে বালু উত্তোলন

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। দিনরাত মিলিয়ে পদ্মা সেতুর আশপাশে নদীতে শতাধিক ড্রেজারে চলছে এ বালু উত্তোলন। আর সেই বালু নিতে পদ্মার বুকে নেমেছে বাল্কহেডের ঢল। যদিও তেমন কোনো তৎপরতা নেই প্রশাসন, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের। যদিও মাওয়া কোস্ট গার্ড বলছে—অভিযানে গেলেই ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো সেতু কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কাগজপত্র দেখাচ্ছে বলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছে না। আর নৌপুলিশও জানিয়েছে প্রায় একই কথা।

আজ মঙ্গলবার সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাটের অদূরে পদ্মার বুকে একাধিক ড্রেজার অনবরত বালু উত্তোলন করে চলছে। বালু লোড করতে সেখানে জমা হচ্ছে বাল্কহেড।

এক অভিযোগ বলছে, পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ তাদের কাজের সুবিধার্থে ১৬টি ড্রেজারকে বালু কাটার অনুমতি দিয়েছে। অথচ এগুলোর বাইরে পদ্মার বুকে এখন বালু উত্তোলনে মহোৎসবে মেতেছে শতাধিক ড্রেজার। দিনের বেলায় ড্রেজার কম দেখা গেলেও রাতে বেড়ে যায় বলে দাবি স্থানীয়দের।

এদিকে, চাঁদের আলো ড্রেজিং প্রকল্প, বিক্রমপুর ড্রেজিং প্রকল্প, মদিনার আলো-১, বিসমিল্লাহ-২, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, আল্লাহ ভরসা, রিভারডিক্স ড্রেজিং প্রকল্প, পদ্মা লোড ড্রেজার-২, আল ফাতেহা ড্রেজিং প্রকল্প, এমভি আল-আরাফ, মেসার্স তোফাজ্জল মোল্লা, এমভি সিয়াম প্রভা, এমভি মোনজিয়াত, মেসার্স মরিয়ম সালমা-১, দক্ষিণ দশআনী, এমভি হাসনাত হাফিজুর-১, এমভি মিশু মোল্লা এমন বাহারী নামের ড্রেজারে বালু উত্তোলনের দৃশ্য সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা গেছে।

ড্রেজার ও বাল্কহেড শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অনুমতি আছে। অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ড্রেজার শ্রমিক জানান, ৬০ পয়সা ঘনফুট দরে বাল্কহেডগুলোর কাছে বালু বিক্রি করছেন তারা। আয়তন অনুযায়ী একেকটি বাল্কহেডের ছয় হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘনফুট বালু ধারণক্ষমতা রয়েছে।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘পদ্মায় কোনো বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়নি। গেল ছয় মাসের তথ্য যদি দেখা যায়—তবে অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধ ড্রেজার বা অবৈধ বাল্কহেড যা-ই বলুন; বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫০টি নৌযান চলাচল অনুপযোগী করা হয়েছে।’

মাওয়া কোস্ট গার্ডের কমান্ডার বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘আমরা অভিযানে গেলেই ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো সেতু কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কাগজপত্র দেখাচ্ছে। এতে আমরা কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।’

পদ্মা নদীজুড়ে অবাধে বাল্কহেড চলাচল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌপুলিশের অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগেও ড্রেজার নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। বরাবরই সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, সেগুলো তাদেরই।’ তিনি আরও বলেন, ‘অবাধে বাল্কহেড চলাচল আর করবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাইল ড্রাইভের যন্ত্রাংশ নদীর তলদেশ থেকে উঠানোর জন্য ১৬টি ড্রেজারকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেতুর নির্দিষ্ট (২৭ থেকে ২৮) পিলারের ২৫০ মিটারের মধ্যে ওই ড্রেজারগুলো বালু উত্তোলন করবে। তবে বিক্রি করতে পারবে না।

দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘১৬টি ড্রেজারের বাইরে যা আছে—তার সবই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।’

এনটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.