এবার ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় দুই পাশে বাঁশ বেঁধে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হলো মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া-বালিগাঁও-মুন্সিগঞ্জ সড়কের সেই সরু বেইলি সেতুটি। কয়েক দিন আগে নাট–বল্টু ও স্টিলের পাটাতনের ঝালাই করা অংশ খসে হেলে পড়েছিল সেতুর উত্তর পাশ।
সেতুটির অবস্থান হলদিয়া ইউনিয়নের ছাতি মসজিদ এলাকায়। বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এ রকম জরাজীর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছিল যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন।
গত সোমবার দিবাগত রাতে হঠাৎ সেতুতে একটি ভারী লরি ধাক্কা দেয়। এ ছাড়া ওই দিন সন্ধ্যায় একটি পিকআপ হেলে যাওয়া অংশে গিয়ে ধাক্কা খায়। এতে হেলে পড়া সেতুটি আরও হেলে পড়ে। সেই সঙ্গে সেতুর একটি প্লেটের সঙ্গে আরেকটি প্লেটের অধিকাংশ জোড়া (ওয়েল্ডিং) খুলে যায়।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, পিকআপটি কোনো রকমে উদ্ধার করা হয়। সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহিন সরদার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আবদুল আউয়ালকে বিষয়টি জানান। ইউএনও সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেন।
সেতুর দুই পাশে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ জন্য লৌহজং থেকে মাওয়া হয়ে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ছাতি মসজিদ এলাকার কয়েকজন বলেন, মাওয়া-বালিগাঁও-মুন্সিগঞ্জ সড়কে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও মানুষ যাতায়াত করে। এ সড়ক দিয়ে লৌহজং থেকে ঢাকাগামী দুটি পরিবহনের বাস চলাচল করে। এ ছাড়া জেলা সদরে যাওয়ার প্রধান সড়ক এটি। সেতুর দুই পাশে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ জন্য লৌহজং থেকে মাওয়া হয়ে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বালিগাঁও থেকে মালির অংক, লৌহজং সদর হয়ে মাওয়া ও ঢাকাগামী যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ থাকায় গণপরিবহন বালিগাঁও থেকে মাওয়া না গিয়ে মালির অংক, নওপাড়া বাজার হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। ফলে যাত্রীদের সময় ও অর্থ বেশি ব্যয় হচ্ছে।
বুধবার দিনভর লৌহজং থেকে ঢাকা এবং মাওয়া থেকে লৌহজং সদর ও জেলা সদরগামী মানুষকে ঘুরপথে গ্রামের ভেতর দিয়ে ও বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হয়েছে। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পেছনে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও খামখেয়ালিপনা দায়ী বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
হেলে পড়া সেতুটির একটি প্লেটের সঙ্গে আরেকটি প্লেটের অধিকাংশ জোড়া (ওয়েল্ডিং) খুলে গেছে। বুধবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া-বালিগাঁও-মুন্সিগঞ্জ সড়কে
সেতুসংলগ্ন দক্ষিণ হলদিয়া গ্রামের আলম শিকদার, মোসেল ব্যাপারী, হবি হালদার জানান, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বেশ কয়েকবার পরিদর্শনে এলেও সেতু মেরামতে কোনো ব্যবস্থা নেননি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছে মানুষ। যানবাহন চলাচলের জন্য দ্রুত সেতুটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
এলাকার বাসিন্দারা আরও জানান, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সেতু ভেঙে খালে পড়ে সিমেন্টবাহী একটি ট্রাক। এতে তিন সপ্তাহ সেখানে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউএনও মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সওজকে সেতুর বিষয়ে চার-পাঁচবার ফোন করে জানিয়েছি। তাঁরা সময়মতো মেরামত করলে সেতুর এমন অবস্থা হতো না।’
সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম বলেন, সেতুটির ধারণক্ষমতা পাঁচ টন। অথচ এ সেতু দিয়ে কাঠবোঝাই ২০ থেকে ২৫ টনের গাড়ি যাতায়াত করে। এ কারণে কিছুদিন পরপর সেতুটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেতু সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকের অভাবে সেতুর মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে শ্রমিক আসতে দেরি হবে। এ কয় দিন যাত্রী–চালকদের বিকল্প পথ ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
প্রথম আলো
Leave a Reply