মুন্সীগঞ্জে সড়ক-নৌপথে ৮৪ চেকপোস্ট, ঢাকামুখী পরিবহন প্রায় বন্ধ

বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই পুলিশি তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে শুক্রবার তা আরও জোরদার করা হয়েছে। ঢাকায় ‘বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে’ মুন্সীগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে। সড়ক, মহাসড়ক ও নৌ-পথে গুরুত্বপূর্ণ ৮৪টি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী।

এই অবস্থায় নাশকতার আশঙ্কায় অনেক পরিবহন মালিক গাড়ি বের করছেন না। গণপরিবহন না পেয়ে যাত্রীরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়ক-মহাসড়কে লোকজনের চলাচলও কমে গেছে।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মাহফুজুর রহমান আল মামুন শুক্রবার বলেন, “মহান বিজয় দিবস ও ৩১ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জে ছয় স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।”

“ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক ও নৌপথে জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ৮৪টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার পুলিশ কাজ করছে।“

পুলিশ জানায়, অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গজারিয়া উপজেলার জামালদী, ভাটেরচর, আনারপুরা, ভবেরচর, দঁড়িবাউশিয়া, মধ্যম বাউশিয়া, পাখির মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের মোবাইল টিম, অভিযানিক টিম, স্টাইকিং ফোর্স ও নৌ-পুলিশের একাধিক টিম সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।

এদিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে দিনভর পদ্মা সেতু টোল প্লাজা থেকে ঢাকামুখী কুচিয়ামোড়া সেতুর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল দেখা গেছে। শ্রীনগরের ছনবাড়ি মোড়, মাওয়া চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহনে তল্লাশি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

পরিবহন চালক ও যাত্রীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই এ তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে শুক্রবার তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে সাংগঠনিক বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশ করেছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় সবশেষ শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করার কথা রয়েছে দলটির।

এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার থেকেই আশপাশের সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী পরিবহনে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের মোবাইল ফোনের ক্ষুদে বার্তাও চেক করা হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশি তল্লাশির কারণে, যাত্রী কমে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে পরিবহন চালকদেরও।

শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে কিছু কিছু বাস চলাচল করলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে। দুপুরের পরে বাস চলাচল একবারেই কমে যায়। মহাসড়ক দিয়ে তেমন কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি।

দু-একটি বাস দক্ষিণবঙ্গ থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকার দিকে যেতে দেখা গেছে। পদ্মা সেতুর উত্তর থানার মোড়ে যাত্রীদের দেখা গেছে, দক্ষিণবঙ্গমুখী বাসের অপেক্ষায় থাকতে।

মুন্সীগঞ্জের ইলিশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আকবর শুক্রবার দুপুরে বলেন, “আমাদের কোনো বাস বন্ধ নেই। আমরা মালিক সমিতি বসে সিদ্ধান্ত নেই, কোনো বাস বন্ধ রাখব না। তবে শুক্রবার ঢাকামুখী যাত্রী কম থাকায় বাসও ছেড়েছে কম।”

মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. জিয়াউর হুদা বলেন, “মহাসড়কে তেমন কোনো যানবাহন না থাকায় আমরা এখন ট্রাফিকের দায়িত্ব রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছি। পদ্মা সেতু থানার কাছে চেকপোস্টের দায়িত্ব পালন করছি।“

“সকাল থেকে মহাসড়কে তেমন যানবাহন নেই বললেই চলে। মাঝে মধ্যে দু-একটি বাস আসছে দক্ষিণবঙ্গ থেকে। কিছু মালবাহী ট্রাক ও পিকআপভ্যানও চলাচল করছে।”

এদিকে মুন্সীগঞ্জের বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলায় গ্রেপ্তারের আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন।

সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বলেন, “মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সহিংসতার মামলায় আমাদের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী ও অজ্ঞাত পরিচয় অনেককে আসামি করা হয়েছে। এ সব মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আগে থেকেই ঢাকায় স্বজনদের বাসায় অবস্থান নিয়েছেন।“

“আমরা হয়তো দু-একদিন আগে ঢাকায় যেতাম। কিন্তু মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে এখন ঢাকায় অবস্থান করছি। ১০ তারিখের মহাসমাবেশে আমরা উপস্থিত থাকব।”

বিডিনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.