বজ্রযোগনী-সুখবাসপুর সড়ক: ধুলায় অতিষ্ঠ জীবন

যানবাহন চলাচলের সময় বা সামান্য বাতাসেও এসব ধুলা উড়ে বাড়িঘর, গাছপালায় জমেছে লাল আস্তর। চরমে পৌঁছেছে ভোগান্তি। সড়কের উন্নয়নের কাজের জন্য পুরোনো পিচঢালাই ওঠানো হয়। তার ওপরে বিছানো হয় ইটের খোয়া। এরপর এভাবেই ফেলা রাখা হয়েছে কয়েক মাস ধরে। যানবাহনের চাকার আঘাতে ইট-বালু গুঁড়া হয়ে লাল পাউডারের মতো হয়ে গেছে। যানবাহন চলাচলের সময় বা সামান্য বাতাসেও এসব ধুলা উড়ে বাড়িঘর, গাছপালায় জমেছে লাল আস্তর। এমন চিত্র মুন্সিগঞ্জের সদর উপজেলার বজ্রযোগনী-সোমপাড়া-সুখবাসপুর সড়কে।

সড়কে যখন খানাখন্দ ছিল, তখনও শান্তিতে ছিলাম। আট-নয় মাস ধরে সড়কের কাজ ফেলে রেখেছে। ইটের গুড়ার লাল ধুলাবালুতে ঘরে থাকতে পারছি না।
আলমগীর হোসেন, স্থানীয় বাসিন্দা, সুখবাসপুর

এই সড়কের কোথাও এক পাশে, কোথাও দুই পাশে আছে বসতবাড়ি, দোকানপাট, স্কুল, মসজিদ, মন্দির। ধুলায় দুর্ভোগের শেষ নেই সড়কটি ব্যবহারকারী ও আশেপাশের বাসিন্দাদের। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ তাঁরা। সুখবাসপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সড়কে যখন খানাখন্দ ছিল, তখনও শান্তিতে ছিলাম। আট-নয় মাস ধরে সড়কের কাজ ফেলে রেখেছে। ইটের গুড়ার লাল ধুলাবালুতে ঘরে থাকতে পারছি না। ঘরের খাবারদাবার, জামাকাপড়, আসবাবপত্র—সবকিছু ধুলাবালুতে নষ্ট হচ্ছে। ঘরের সবার সর্দি–কাশি লেগেই আছে।’

এ পথ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন মানুষকে কী পরিমাণ দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে, সেটা ভাষায় বলার মতো নয়।
আমিনুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষক, সুখবাসপুর শ্যাম নলিনী উচ্চবিদ্যালয়

কিছুদিন আগে সড়কটি পরিদর্শন করে এসেছেন জানিয়ে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী শফিকুল আহসান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ফেলে রেখেছে। এজন্য দুর্ভোগের সৃষ্টি রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ করার জন্য বারবার বলা হচ্ছে।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, সুখবাসপুর বটতলা এলাকা থেকে বজ্রযোগনী এলাকা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৭০ মিটার সড়কের কাজ ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা চুক্তি মূল্যে বাস্তবায়ন করছে সুরাইয়া ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নিয়েছে তারা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মিজান মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, জিনিসপত্রের দাম খুব বেশি। চলতি মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কটিতে যানবাহন চলাচল করলে ধুলাবালুতে সড়ক অন্ধকার হয়ে আসে। এসব বাতাসে উড়ে রাস্তার পাশের বাড়িঘর, গাছপালা, দোকানপাট, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, ঝোপঝাড়ের ওপর পড়ছে। আশেপাশের ঝোপঝাড় ও গাছপালার পাতায় লালচে আস্তরণ পড়েছে। পাল্টে গেছে বাড়িঘর, স্কুল, দোকান, পাট ও মসজিদের দেয়ালের রং। ধুলা থেকে বাঁচতে কেউ কেউ পাইপ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছেন।

সদর উপজেলার রামপাল, মহাকালি, বজ্রযোগনী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ টঙ্গিবাড়ী উপজেলার অন্তত ১৫-২০ হাজার মানুষ নিয়মিত এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। এছাড়া বড় বড় ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। পথচারী ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, আট মাস আগে রাস্তার উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির শুরু হয়। কাজ কবে শেষ হবে তা জানেন না তাঁরা।

সড়কের পাশেই সুখবাসপুর শ্যাম নলিনী উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের কাজ না করে কেন এভাবে ফেলে রাখা হলো। এ পথ দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিন মানুষকে কী পরিমাণ দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে, সেটা ভাষায় বলার মতো নয়। একবার কেউ এ পথ দিয়ে গেলে মানুষের চেহারা আর মানুষের থাকে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, এলজিইডি, সবার গাফলতির জন্য আমাদের ভুগতে হচ্ছে।’

মসজিদের সামনের সড়কে পাইপ দিয়ে পানি ছিটাচ্ছিলেন সোমপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ মান্নান শেখ। তিনি বলেন, ‘মসজিদে ধুলা–ময়লায় স্বস্তিতে নামাজ পড়া যায় না। ঘরবাড়ি সব লাল হয়ে গেছে। প্রতিদিন দু–তিনবার করে পানি দিচ্ছি।’

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.