চিহ্নিত বধ্যভূমি অরক্ষিত, অচিহ্নিতগুলোর তথ্য নেই

কাজী সাব্বির আহমেদ দীপু: ১৯৭১ সালের ১৪ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হানা দেয় মুন্সীগঞ্জ শহরতলির কেওয়ার চৌধুরী বাড়িতে। সেখান থেকে ১৭ জনকে ধরে নিয়ে যায় মহাকালী ইউনিয়নের সাতানিখিল এলাকার সিকদার বাড়ির খালপাড়ে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করে হানাদাররা। প্রাণ হারান সবাই। এ ঘটনার দীর্ঘ ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতানিখিল খালপাড়ের বধ্যভূমি চিহ্নিত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গাছপালা গজিয়ে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এখানে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাতবরণ করেছিলেন ১৭ জন।

মুন্সীগঞ্জ জেলায় এমন বধ্যভূমির সঠিক সংখ্যা জানা নেই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। হাতে গোনা কয়েকটি বধ্যভূমি চিহ্নিত করে স্মৃতিস্তম্ভ, নামফলক ও সীমানা দেয়াল স্থাপিত হলেও বর্তমানে সবই অরক্ষিত। বছরের ১১ মাস এর কোনো খোঁজখবরই রাখেন না কেউ। বিজয়ের মাস ডিসেম্বর এলে কয়েকটি বধ্যভূমিতে ঝাড়ূ পড়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের; রঙের ছোঁয়াও পায় কয়েকটি। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর শ্রদ্ধা জানানো শেষে আবার মনোযোগ হারিয়ে ফেলে বধ্যভূমিগুলো।

সাতানিখিল খালপাড়ের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী মো. লাল মিয়া সিকদার বলেন, এখানে চৌধুরী বাড়ির ১৭ জন ছাড়াও বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে হানাদাররা। অথচ স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই বধ্যভূমি সংরক্ষণে একটি ইটও গাঁথা হয়নি। ফলে বধ্যভূমিটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন অনু বলেন, জেলার আলোচিত বধ্যভূমির মধ্যে রয়েছে সাতানিখিল খালপাড়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতে তা সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিতে হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৯ মে পাকিস্তানি সেনারা জেলার গজারিয়া উপজেলার ফুলদী নদীর পাড়ে হত্যা করে ৩৬০ জনকে। তাঁদের ধরে আনা হয়েছিল নদীতীরের গ্রাম গোসাইচর, নয়ানগর, গজারিয়া, কাজীপুরা ও বালুরচর থেকে। ১০ বছর আগে এ বধ্যভূমিতে শহীদদের নামফলক নির্মাণ করা হয়। পরের বছর নির্মিত হয় একটি সীমানা দেয়াল।

১০ মে রাতে পাকিস্তানিরা হানা দেয় টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাপুরের পাল বাড়িতে। সেখানে ১৯ জনকে হত্যার পর ফেলে রাখে বাড়ির পুকুরপাড়ে। ১৯৯৮ সালে আব্দুল্লাপুর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে সেখানে নির্মিত হয় নামফলক। তবে এতে অনেকের নাম-পরিচয় উল্লেখ নেই।

হানাদারদের যুদ্ধকালীন ক্যাম্প ছিল মুন্সীগঞ্জ শহরের হরগঙ্গা কলেজে। অগণিত মুক্তিকামী বাঙালিকে ধরে আনা হতো সেখানে। পরে নির্মম নির্যাতনে হত্যার পর ফেলে দেওয়া হতো এ ক্যাম্পের অদূরের একটি ডোবায়। ওই বধ্যভূমি সংরক্ষণে ২০১২ সালে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিফলক। তবে এখানে কতজন মানুষের মরদেহ ফেলা হয়, তার সঠিক তথ্য নেই।

জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আব্দুল কাদের মিয়ার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তবে আব্দুল কাদের মিয়া বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.