দিন দিন বাড়ছে ভাসমান পিঠার দোকান। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে চান অনেকেই। তিনটি চুলা, তাতে তিনটি ভাপা পিঠা তৈরির পাতিল বসানো হয়েছে। বাটিতে দুধমিশ্রিত চালের গুঁড়া দিয়ে তার ওপরে গুড়, নারকেল ছিটিয়ে দিয়ে ভাপে দিচ্ছেন দোকানি। সেই পিঠার জন্য চুলার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েক ক্রেতা। ধোঁয়া ওঠা গরম-গরম পিঠা চুলা থেকে নামতেই যাচ্ছে ক্রেতাদের হাতে। কেউ খাচ্ছেন, কেউ কেউ প্যাকেট করে নিয়ে যাচ্ছেন বাসাবাড়ির জন্য।
পৌষের শীতের সন্ধ্যায় মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় কামাল হোসেনের ভাপা পিঠার দোকানের চিত্র এটি। কামালের মতো শতাধিক ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান রয়েছে শহরের আনাচকানাচে। সন্ধ্যা হলে প্রতিটি দোকানেই পড়ে পিঠা বিক্রির ধুম।
দিন দিন বাড়ছে ভ্রাম্যমান পিঠার দোকান। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে চান অনেকেই। তবে শীতের পিঠার স্বাদ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না কেউ। এ কারণে মুন্সিগঞ্জ শহরের সুপারমার্কেট, মুন্সিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক, বাজার, কাচারিঘাট, হাট লক্ষ্মীগঞ্জ, মোল্লাপাড়া, ইসলামপুরের যোগিনীর ঘাট, মুন্সিরহাট, দয়াল বাজার, নয়াগাঁওসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়
মৌসুমি পিঠাপুলির দোকানে ভিড় লেগেই থাকছে। এসব দোকানে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হচ্ছে।
দোকানি কামাল হোসেন বলেন, প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ২০-২৫ কেজি চালের পিঠা বিক্রি করেন। ১৯ বছর ধরে শীত মৌসুমে এ ব্যবসা করে আসছেন তিনি। তাঁর বানানো পিঠা কিনতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা আসেন। আগে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা আয় হতো তাঁর। এখন সব জিনিসের দাম বাড়াতে পিঠা তৈরির খরচ বেড়েছে। সব খরচ বাদে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা লাভ থাকছে তাঁর।
সপ্তাহ ধরে মুন্সিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, সন্ধ্যার আগ থেকেই দোকানিরা তাঁদের পিঠার পসরা বসাচ্ছেন সড়ক কিংবা বাড়ির পাশের গলিতে। চুলায় আগুন জ্বেলে একের পর এক পিঠা বানাতে থাকেন তাঁরা। অন্যদিকে ক্রেতারা গরম-গরম পিঠা সাবাড় করতে থাকেন। এসব দোকানে ১০ টাকায় চিতই পিঠা, ২৫ টাকায় ডিম চিতই, ২০ থেকে ৪০ টাকায় ভাপা ও পাটিসাপটা পিঠা পাওয়া যায়। চিতই পিঠার সঙ্গে সহজে ধনেপাতা, মরিচবাটা, শুঁটকির ভর্তা বিনা মূল্যে মেলে।
শহরের হাট লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার পিঠা বিক্রেতা হাসিনা বেগম বলেন, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি চালের চিতই পিঠা বিক্রি করেন তিনি। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পিঠার চাহিদাও বাড়ছে। দুধ চিতই বানাতে এলাকার মানুষ প্রতিদিন আসছেন, পিঠার অর্ডার করে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ চুলার আগুনের পাশে বসেই দু-চারটি করে পিঠা খেয়ে যাচ্ছেন।
পিঠার ক্রেতারা বলেন, শীত বাড়লে পিঠা না খেলে চলে না। বাড়িতে শীতের পিঠা বানাতে চাল গুঁড়া করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই শীতের পিঠার স্বাদ নিতে ভাসমান দোকানগুলোর ওপর ভরসা করে থাকেন তাঁরা।
প্রথম আলো
Leave a Reply