পদ্মায় মাছ শিকার করে জেলেদের জীবিকা নির্বাহ

পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করাই তাদের একমাত্র পেশা। রোদ-বৃষ্টি ও শীত উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মার গভীরে গিয়ে উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে মাছ শিকার করেই চলে তাদের জীবন সংসার।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ভাগ্যকুল ও বাঘড়া এলাকায় পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষা বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৪ শতাধিক জেলে নৌকা/ট্রলার রয়েছে। এসব জেলে নৌকায় দিনরাত সমান তালে মাছ ধরার কাজে শ্রম বিক্রি করছেন হাজারো মৎস্য শ্রমিক। বেশীর ভাগ পেশাদার জেলে স্থানীয় মৎস্য আড়ৎদারের কাছ থেকে দাদন নিয়ে এ পেশায় টিকে আছেন।

এখন পদ্মায় এ অঞ্চলের জেলেরা পাঙ্কাস, বাগাইর ও আইড় মাছের সন্ধানে নদী চষে বেড়াচ্ছেন। তবে স্থানীয় জেলেরা জানিয়েছেন, নদীতে এখন জালে এসব মাছ ধরা পরছে কম। ১২ ঘন্টায় নদীতে দু‘বার জোয়ার ও ভাটার সৃষ্টি হয়। তারা জোয়ারের সময়ে পাঙ্কাস ধরতে নামছেন পদ্মায়।

জানা গেছে, উপজেলায় তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবির সংখ্যা মোট ২ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে জেলে সমিতির আওতায় ভাগ্যকুলে ৪৮৭ জন, বাঘড়ায় ৯৫ জন ও রাঢ়িখালে ৪৬ জন। তালিকাভুক্ত সমিতির সদস্যদের বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনার আওতায় খাদ্যসহ অন্যান্য সাহায্য সহযোগীতা করা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভাগ্যকুলে পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকায় অসংখ্য জেলে নৌকা নোঙ্গর করেছে। নৌকায় কটসুতার বড় খোপের জাল নিয়ে নদীতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

এ সময় মুকিম (৪০), মানিক শেখ (৩০)সেরাজল বেপারী (৫০), মন্টু রাজবংশী (৪৭), গোপাল (৪৫) বলেন, এখন নদীতে পাঙ্কাস ও বাগাইর মাছ ধরার জন্য যাচ্ছি। যদিও নদীতে এসব মাছ জালে কম ধরা পড়ছে। কোন কোন দিন খালি হাতেও ফিরতে হচ্ছে আমাদের। তার পরেও জাল নিয়ে যেতে হচ্ছে।

কারণ হিসেবে তারা জানান, এখানকার বেশীরভাগ জেলেই প্রয়োজনীয় জাল ও জনবল সংগ্রহের জন্য দাদন নিয়েছেন। মাছ বিক্রি করেই এ টাকা পরিশোধ করতে হবে তাদের।

জেলে সমিতির সভাপতি দুলাল মাদবর বলেন, এখন নদীতে জালে ইলিশ কম ধরা পরছে। তাই অনেকেই পাঙ্কাস ধরতে নদীতে যাচ্ছেন। নদীতে ইলিশও কম পাওয়া যাচ্ছে। এখন জাটকা ধরা ও ক্রয় বিক্রয় নিষেধ। তাই আমরা জাটকা ধরছি না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাঙ্কাস ধরার জালের দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে কয়েক হাজার ফুট। একেকটি জাল তৈরী করতে জেলের খরচ পড়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা। উপজেলার ভাগ্যকুল, বালাশুর, আল-আমিন বাজার, বাঘড়া, শ্রীনগর ছনবাড়ি ও হাঁসাড়া মৎস্য আড়তগুলোতে স্থানীয় জেলেরা নদীর এসব মাছ বেচাকেনা করছেন।

আড়তে পদ্মা নদীর তাজা মাছের পাশাপাশি আড়িয়াল বিলের ডাঙ্গা ও পুকুরের দেশীয় জাতের নানা প্রজাতির মাছও কেনাবেচা হচ্ছে । শ্রীনগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমীর কুমার বসাক বলেন, ভাগ্যকুল, বাঘড়া ও রাঢ়িখাল এলাকার মৎস্যজীবিরা পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করেন বেশী। সরকারের পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত জেলে সদস্যদের বছরে ৪ মাস খাদ্য সহায়তা করা হয়।

এসময় নদীতে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে জাটকা ধরা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ অঞ্চলের জেলেরা নদীতে ইলিশের পাশাপাশি পাঙ্কাস ও বাগাইর মাছ ধরতে নদীতে যাচ্ছেন।

নিউজজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.