পদ্মার বুক চিরে অবাধে বালু উত্তোলন

পদ্মা সেতুর মুন্সীগঞ্জ অংশের প্রায় আড়াই শ’ মিটার ছাপিয়ে গেছে অসংখ্য ড্রেজারে। এসব ড্রেজার দিয়ে পদ্মার বুকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ। লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর তীরে বিভিন্ন পয়েন্টে অবাধে বালু উত্তোলনে মেতে উঠেছে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী। কোনো প্রকার বিরতি ছাড়া রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা সেতুর আশপাশ থেকে শতাধিক ড্রেজার দিয়ে অবিরত তোলা হচ্ছে বালু। আর সেই বালু নিতে পদ্মার বুকে নেমেছে বাল্কহেডের ঢল। বালু উত্তোলন ছাড়াও পদ্মায় বাল্কহেড ঠেকাতে প্রশাসন কিংবা নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।

সোমবার বিকালে সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাটের অদূরে পদ্মার বুকে শতাধিক ড্রেজারে অনবরত বালু উত্তোলন করে চলেছে। বালু উত্তোলন করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর পিলারের কাছাকাছি স্থান থেকেও। তবে পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের কাজের সুবিধার্থে ১৬টি ড্রেজারকে বালু কাটার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। অথচ এগুলোর বাইরে পদ্মার বুকে এখন বালু উত্তোলনে মহোৎসবে মেতেছে শত ড্রেজার।

এ চিত্র দিনের বেলায় অবলোকন করা গেলেও রাতের বেলায় বালু উত্তোলনে ড্রেজারের সংখ্যা আরও বাড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এদিকে, চাঁদের আলো ড্রেজিং প্রকল্প, বিক্রমপুর ড্রেজিং প্রকল্প, মদিনার আলো-১, বিসমিল্লাহ-২, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, আল্লাহ ভরসা, রিভারডিক্স ড্রেজিং প্রকল্প, পদ্মা লোড ড্রেজার-২, আল ফাতেহা ড্রেজিং প্রকল্প, এমভি আল-আরাফ, মেসার্স তোফাজ্জল মোল্লা, এমভি সিয়াম প্রভা, এমভি মোনজিয়াত, মেসার্স মরিয়ম সালমা-১, দক্ষিণ দশআনী, এমভি হাসনাত হাফিজুর-১, এমভি মিশু মোল্লা প্রভৃতি বাহারী নামের ড্রেজারে বালু উত্তোলনের দৃশ্য সরজমিন প্রত্যক্ষ করা গেছে। আর পদ্মার বুকে এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটে কারা রয়েছেন-তা জানার উপায় নেই। ড্রেজার ও বাল্কহেড শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে অনুমতি আছে বলে সাফ জানাচ্ছেন। তারা জানেন অনুমোদন নিয়ে বৈধ ভাবেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ড্রেজার শ্রমিক জানান, ৬০ পয়সা ঘনফুট দরে বাল্কহেডগুলোর কাছে বালু বিক্রি করছেন তারা। আয়তন অনুযায়ী একেকটি বাল্কহেডে ৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘনফুট বালু ধারণক্ষমতা রয়েছে। তবে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, পদ্মায় কোনো বালুমহালের ইজারা দেয়া হয়নি। গেল ৬ মাসের তথ্য যদি দেখা যায় তবে অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধ ড্রেজার বা অবৈধ বাল্কহেড যা-ই বলুন বিভিন্ন সময়ের অভিযানে ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫০টি নৌযান চলাচলে অকেজো করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টেস্টা পাইল ড্রাইভের যন্ত্রাংশ নদীর তলদেশ থেকে উঠানোর জন্য ১৬টি ড্রেজারকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেতুর নির্দিষ্ট পিলার তথা ২৭ থেকে ২৮ নং পিলারের ২৫০ মিটারের মধ্যে ওই ড্রেজারগুলো বালু উত্তোলন করবে শুধুমাত্র। তবে বিক্রি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ১৬টি ড্রেজারের বাইরে যা আছে-তা সব অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।

মাওয়া কোস্টগার্ডের কমান্ডার বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা অভিযানে গেলেই ড্রেজার ও বাল্কহেডগুলো সেতু কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কাগজপত্র দেখাচ্ছে। এতে আমরা কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না। পদ্মা জুড়ে অবাধে বাল্কহেড চলাচলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, এর আগেও ড্রেজার নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। বরাবরই সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে সেগুলো তাদেরই। তিনি আরও বলেন, অবাধে বাল্কহেড চলাচল আর করবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মানবজমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.