পাটের দাম কমেই চলেছে

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপার পাটের হাটে সপ্তাহে দুই দিন কৃষকরা পাট নিয়ে আসেন। কিন্তু উপযুক্ত দাম না পেয়ে তাঁরা হতাশ। ছবি : কালের কণ্ঠ

মুন্সীগঞ্জের পাটের বাজারে ধস নেমেছে। টানা দুই মাস ধরে পাটের বাজারের এই দরপতন চলছে। এখন প্রতি মণ পাটের দাম উৎপাদন খরচের চেয়েও ৫০০ টাকা কম। কৃষকের দাবি, সিন্ডিকেট করে ন্যায্য মূল্য থেকে তাঁদের বঞ্চিত করে ফায়দা লুটছেন আড়তদাররা। তবে আড়তদাররা অভিযোগ অস্বীকার করে দোষ চাপাচ্ছেন মিল মালিকদের ওপর।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দীঘিরপার বাজারে জেলার সবচেয়ে বড় পাটের হাট। সারি সারি নৌযানে চলে কেনাবেচা। প্রতি সোম ও শুক্রবার কৃষকরা পাট নিয়ে আসেন এ হাটে। এখান থেকে পাইকাররা পাট কিনে কারখানা মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। মুন্সীগঞ্জ ছাড়াও চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ আশপাশের এলাকার কৃষক নৌকা ও ট্রলারে করে হাজার হাজার মণ পাট নিয়ে আসেন। মৌসুমে তিন-চার মাস পাটের এ হাট বসে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার মণ পাট কেনাবেচা হয় এ হাটে। প্রতি হাটবারে বেচাকেনা কোটি টাকা ছাড়ায়।

গত সোমবার হাটে আসা পাট বিক্রেতা হান্নান কাজী বলেন, ‘দেড় কানি (প্রতি কানিতে ১৪০ শতাংশ) জমিতে আগের বছর পাট চাষ করেছিলাম। সে সময় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এবার খরচ হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা। কামলা খরচ, পরিবহন খরচ বাড়ছে। এক মণ পাট উৎপাদন করতে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ বাজারে এখন প্রতি মণে ৫০০ টাকারও বেশি লোকসান দিতে হচ্ছে। ’

শাহিন মাঝি বলেন, ‘পানির অভাবে ঠিকমতো পাট পচাতে পারিনি। যা-ও উৎপাদন করতে পারছি, তাতে খরচ ওঠা দূরের কথা, বিরাট লস হয়ে যাচ্ছে। ’

কৃষকদের দাবি, পাটের দর এতটাই কমেছে যে উৎপাদন খরচেই মণপ্রতি হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।

দীঘিরপার হাট কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হক মোল্লা বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে পাটের দামটা কমিয়ে ফেলেছে একটি সুবিধাভোগী মহল। তাই কৃষক এখন নিরুপায়। ’ তবে আড়তদার ইব্রাহিম মাতবর সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করে দায় চাপান মিল মালিকদের ওপর। তিনি বলেন, ‘মিল মালিকরা আমাদের থেকে কম দামে কিনছে। তাই আমরা বাজার থেকে বেশি দামে কিনে লোকসান দিতে পারব না। ’

মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক খুরশিদ আলম পাটের দরপতনে হতাশা প্রকাশ করে জানান, উৎপাদন খরচেও যদি কৃষক পাট বিক্রি করতে পারতেন, তবে তাঁর পাটের কাঠিটুকুই লাভ থাকত। কিন্তু এখন লোকসানেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এ ডি এম মিজানুল হক জানান, বর্তমানে বাজারে সুতি পাট প্রতি মণ এক হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু আর তোসা পাট দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.