মুন্সিগঞ্জ স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি

চাঁদা না দিলে গাড়ির ক্ষতি করা হয়। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব করা হলেও তারা নিশ্চুপ। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের কাছ থেকে দেদার চাঁদা তোলা হচ্ছে। চালকেরা বলছেন, স্ট্যান্ডগুলোতে যাত্রী নিয়ে গেলেই চাঁদা দিতে হচ্ছে। চাঁদা না দিলে গাড়ির ক্ষতি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চাঁদা তুলে যাচ্ছেন কয়েকজন ব্যক্তি। বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে থাকছে প্রশাসন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইজিবাইকচালক বলেন, ‘১০-১৫ দিন আগে ইজিবাইক নিয়ে শহরের কাছারি চত্বরে (পৌরসভার মোড়) গিয়েছিলাম। সেখানে গাড়ি থামানোর পর ২০ টাকা দাবি করে ওই স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজরা। চাঁদা না দেওয়ায় গাড়ির গ্লাস ভেঙে দেওয়া হয়। গ্লাস কেন ভাঙা হলো জানতে চাইলে তাঁদের মধ্যে একজন সজোরে গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। এমনকি কাছারিঘাট এলাকায় গাড়ি নিয়ে ঢুকতেও নিষেধ করে দেয়।’

শহরের পৌরসভা মোড় এলাকা থেকে শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা, আড়াই থেকে তিন শ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে। এসব যানবাহনে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ সদরের চিতলিয়া, আধারা, মাকাহাটি, খাসেরহাট, টরকি, ফুলতলা, বাংলাবাজার, মুক্তারপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই স্ট্যান্ডে প্রতিটি গাড়ি থেকে সিরিয়াল দেওয়ার নাম করে চাপ প্রয়োগ করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। গাড়ির চালকেরা জানান, ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য প্রতিদিন ১০-২০ টাকা, বড় ইজিবাইক ২০-৩০, সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য ৪০ টাকা চাঁদা আদায় করে স্ট্যান্ডের চাঁদাবাজরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পৌরসভার মোড় স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা তোলেন রবিন হোসেন, মো. হালিম, ওয়াসিম ও মো. আব্বাস নামের চার ব্যক্তি। কয়েকজন ইজিবাইকের চালক জানান, এই স্ট্যান্ডে চারজন চাঁদাবাজি করেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া রবিন। তাঁকে টাকা না দিলেই গাড়ি ভাঙচুর করেন। গাড়ির টায়ার নষ্ট করে দেন। গাড়ি আটকে রাখা হয়, মারধর করা হয় চালককে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব করা হলেও তারা নিশ্চুপ।

অভিযোগের বিষয়ে রবিন হোসেন বলেন, ‘গাড়ির সিরিয়াল ঠিক রাখি। যানজট কমাতে কাজ করি। এর বিনিময়ে মজুরি হিসেবে গাড়িপ্রতি ১০-২০ টাকা নেওয়া হয়। কারও গাড়িও আটকানো হয় না।’ গাড়ির সিরিয়াল ঠিক রাখা ও যানজট নিয়ে কাজ করার অনুমতি কোথায় পেলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে রবিন বলেন, পৌরসভা থেকে দেওয়া হয়েছে। কে দিয়েছে, সেটা বলা যাবে না।

একই চিত্র শহরের ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ বাজার মুন্সিরহাট স্ট্যান্ডে। সেখানেও গাড়ি আটকে প্রকাশ্যে চাঁদা তোলেন মো. রবিন, আনোয়ার হোসেন, আলম, মনসুর নামের কয়েকজন ব্যক্তি। শহর বাজারের স্ট্যান্ড থেকে দক্ষিণ ইসলামপুর, যুগনীঘাট হয়ে চর কিশোরগঞ্জে যাতায়াতকারী ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত রিকশা থেকে চাঁদা তোলেন মুন্সিগঞ্জ শহর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কাশেম মোল্লা।

চালকেরা জানান, প্রতিটি গাড়ি থেকে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেন কাশেম মোল্লা। টাকা না দিলে মারধর করেন। গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। তবে কাশেম জানান, বাজারের যেখান থেকে তিনি টাকা তোলেন, সেটা পৌরসভা থেকে ইজারা নেওয়া জায়গা। তিনি বলেন, ‘কারও কাছ থেকে জোর করে চাঁদা তুলি, এটা বলার সাহস কারও নেই। কেউ সামনে এসে বলতে পারলে শাস্তি মাথা পেতে নেব।’

তবে পৌরসভা থেকে কাউকে কোথাও গাড়ির সিরিয়াল ঠিক করার নামে টাকা তোলার অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়েছেন মুন্সিগঞ্জ পৌর মেয়র ফয়সাল বিপ্লব। যাঁরা চাঁদাবাজি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান মেয়র।

চালক ও পরিবহনের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। প্রতিদিন এগুলো থেকে লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলা হয়। এসব চাঁদাবাজ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের জোরালো উদ্যোগ নেই।

তবে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল মামুন বলেন, চাঁদাবাজদের বিষয়ে জেলা পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে।

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.