মুন্সীগঞ্জে কারুপণ্যে শতাধিক পরিবারের ভাগ্য বদল

মামুনুর রশীদ খোকা: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর, ষোলআনি, ফুলদী ও চরকিশোরগঞ্জ গ্রামে গড়ে উঠেছে কারুপণ্য শিল্প। গ্রামগুলোর শতাধিক পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন।

ওই পরিবারগুলো ‘মা-বাবার দোয়া হ্যান্ডি ক্রাফট’ নামে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করে আসছেন।

উপজেলার নয়ানগর গ্রামের মো. আহসান উল্লাহ ভূঁইয়া হচ্ছেন ওই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। তার অনুপ্রেরণাতেই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়েছেন গ্রামগুলোর ১১৫টি পরিবার। তাতেই ভাগ্য বদলেছে পরিবারগুলোর।

এদিকে, নয়ানগর গ্রামের আহসান উল্লাহ এসএসসি পাশ করার পর পোশাক শিল্প কারখানায় ৪৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন।

২০১৪ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে হ্যান্ডি ক্রাফটের ওপর ঢাকায় প্রশিক্ষণ নেন। এরপর ২০২০ সালে ৫ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজ গ্রামে শুরু করেন হোগলা পাতা, খেজুর পাতা, সন্ধ্যা পাতা, কলাপাতা, খড় ও পাটের তৈরি হ্যান্ডি ক্রাফটের পণ্য তৈরি।

পরবর্তীতে তিনি মা-বাবার দোয়া-নামে প্রতিষ্ঠানে গড়ে তোলেন। তার এই প্রতিষ্ঠানের হয়ে খ্যাতি নয়ানগর ছাপিয়ে যায় ষোলআনি, ফুলদী ও চরকিশোরগঞ্জ গ্রামেও।

আর গ্রামগুলোর শতাধিক পরিবারের নারী-পুরুষের হাতে তৈরি হচ্ছে ফলের ঝুড়ি, ফুলের ঝুড়ি, চামচ রাখার ঝুড়ি, বিভিন্ন প্রকার শোপিস ও হাত ব্যাগসহ নানা পণ্য।

আবার গ্রামগুলোর নারী-পুরুষের হাতে তৈরি ওই সব হ্যান্ডি ক্রাফট পণ্য বিশ্বের ৪৫টি দেশে রপ্তানি করছেন আহসান উল্লাহ।

তিনি জানান, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আমেরিকা,লন্ডন,রাশিয়া, চীন, জাপান, ইতালি, সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এ হ্যান্ডি ক্রাফট পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। যা বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের হ্যান্ডি ক্রাফট উপস্থাপন হচ্ছে।

কাজেই এ শিল্পকে ঘিরে উজ্জ্বল সম্ভাবনা জাগ্রত হয়েছে। এ শিল্পের পণ্যসামগ্রী পরিবেশ সম্মত, পাশাপাশি রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।

আহসান উল্লাহ্ ভূইয়া বলেন, ছোট বেলা থেকেই আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজে কিছু করার স্বপ্ন ছিল। এসএসসি পাশ করার পর আর লেখাপড়া করা হয়নি। পরে পোশাক তৈরি কারখানায় চাকরি করতে থাকি।

‘২০১৪ সালে চাকরি ছেড়ে মামার সহায়তায় ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি হ্যান্ডি ক্রাফট তৈরি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ শেষে বেশ কিছুদিন চাকরি করি। তারপর প্রথমে গাজীপুর কারখানা তৈরি করি। কিন্তু আমার গ্রামের মানুষকে নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন রয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০২০ সালে প্রথমে নিজ গ্রামে নারী-পুরুষদের নিয়ে কাজ শুরু করি।’

নয়ানগর গ্রামের হালিমা বেগম (৪০) বলেন, ৩ বছর আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ কাজ শুরু করি। অবসর সময়ে ঘরে বসেই এ কাজ করছি। এতে মাসে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা রোজগার হয়। আবার কোনো মাসে বেশিও হয়। এতে পরিবারের বাড়তি রোজগার হচ্ছে।

অন্যদিকে, সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্পকে হাজার বছর ধরে টিকিয়ে রাখতে পারবে বলে আশা এ অঞ্চলের মানুষের। তবে প্রচারের অভাবে এ শিল্প তেমন বিকাশ লাভ করতে পারছে না। জেলার গজারিয়া উপজেলার ৪ টি গ্রামে হ্যান্ডি ক্রাফট শিল্প গড়ে উঠা সম্পর্কে জানা নেই বিসিকের।

মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ মুক্তারপুর বিসিকের উপপরিচালক মো. আব্দুল্লাহ্ বলেন, জেলায় হ্যান্ডি ক্রাফটের এমন কর্মযজ্ঞ চলছে-তা আমার জানা ছিল না। যিনি এ শিল্পের প্রসারে কাজ করছেন তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের যদি কোন সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা সহযোগিতার হাত বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছি। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনে ঋণ দেওয়া হবে।

দেশ রুপান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.