শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী ইউনিয়নের শ্রীধরপুর গ্রামে এক গৃহবধূর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করতে গিয়ে গত বুধবার রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে বিবস্ত্র অবস্থায় ধরা পড়ে ১ রাজমিস্ত্রি। স্থানীয়রা ফোন দেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফারুক হোসেনকে। এর পর পরই রাজমিস্ত্রি রনি আহাম্মেদের ওপর শুরু হয় নির্যাতন। চাইনিজ হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রনির ৬টি দাঁত ফেলে দেয়া হয়। শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের ফলে রনি নিস্তেজ হয়ে পড়ে। রনির অবস্থা বেগতিক দেখে রাত সাড়ে ১০টার পর চেয়ারম্যান থানায় ফোন করে জানান, শ্রীধরপুরে ডাকাত ধরা পড়েছে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুমূর্ষু অস্থায় রনি (২৪)কে উদ্ধার করে শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে। এখানেই ঘটনার শেষ নয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পরদিন সকালে রনির ঠিকাদার অহিদ (৩৮) ফোনে বিষয়টি চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন। এর ঘণ্টাখানেক পর চেয়ারম্যান ঢাকা থেকে এলাকায় এসে ঠিকাদারসহ ৬ রাজমিস্ত্রির অবস্থান স্থানীয়দের কাছে বলে দেন। এরপর পরই নিজেদের রক্ষা করার জন্য ৬ রাজমিস্ত্রি চেয়ারম্যানের কাছে আসেন।
তার সামনেই ৬ জনকে ডাকাতির অপবাদ দিয়ে শুরু হয় গণপিটুনি। পরে চেয়ারম্যান আহত ঠিকাদার অহিদ ও রাজমিস্ত্রি ড্যানি (২৭)কে নিয়ে গত বুধবার দুপুরে থানায় যান। সে সময় ডাকাতি প্রমাণ করতে ওই গৃহবধূর এক আত্মীয় হাতে আঘাত নিয়ে অফিসার ইনচার্জের রুমে বসে ছিলেন। এর মধ্যে শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম প্রকৃত ঘটনা জেনে আহতদের ডাকাত হিসেবে গ্রহণ করতে বেঁকে বসেন। বিষয়টি সুরাহা করতে থানায় ছুটে আসেন সাবেক চেয়ার্যামন ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ইকবাল হোসেন মাস্টার। সুরাহা না হওয়ায় চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন আহত ঠিকাদার ও ১ রাজমিস্ত্রিকে তার নিজের জিম্মায় নিয়ে থানা থেকে চলে যান।
শ্রীধরপুর গ্রামের ইউপি সদস্য কে এ জাফর বলেন, ৬ জনের মধ্যে চেয়ারম্যান ২ জনকে থানায় নিয়ে গেছে। বাকি ৪ জনকে উত্তেজিত পোলাপান কে কোথায় নিয়ে গেছে তা বলতে পারবো না। আমরা উত্তেজিত লোকজনকে থামাতে পারিনি।
শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাজমিস্ত্রি রনি জানান, তাদের বাড়ি চাঁপাই নবাবগঞ্জের বাবুপাড়ার হাটকালিগঞ্জের বটতলা। তারা শ্রীধরপুর গ্রামের আসলাম মিয়ার বাড়িতে বিল্ডিং তৈরির কাজ করেন। রাজমিস্ত্রির এই গ্রুপটি ২ বছর আগে আসলাম মিয়ার প্রতিবেশী ইস্রাফিলদের বাড়ির বিল্ডিং তৈরি করে। এর সুবাদে ঠিকাদার অহিদের সঙ্গে ওই বাড়ির এক নারীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মঙ্গলবার রাতে ঠিকাদার ওই বাড়িতে অনৈতিক সম্পর্কের জন্য গেলে রনি সেখানে পাহারা দিতে গিয়ে ধরা পড়ে।
এ ব্যাপারে চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, রাতে ডাকাতির ঘটনা শুনেই আমি পুলিশকে ফোনে জানিয়েছি। পরদিন উত্তেজিত লোকজন ৬ জনকে মারধর করেছে। তাদের মধ্যে ২ জনকে থানায় নিয়ে এসেছি। বাকি ৪ জন হয়তো নিজেদের মতো করে চলে গেছে।
জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ইকবাল মাস্টারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।
শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি ডাকাতি নয়। রাজমিস্ত্রি রনিকে পুলিশ উদ্ধার করেছে। বাকি ২ জনকে চেয়ারম্যান থানায় নিয়ে এসেছিল। মারধরের শিকার কেউ থানায় অভিযোগ দিলে তা গ্রহণ করা হবে।
মানবজমিন
Leave a Reply