শ্রীনগরে বাংলাদেশ সরকার পক্ষের গণপূর্ত নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের জায়গা দখল করে ভরাটের পাশাপাশি ফসলী জমি ভরাট করা হচ্ছে। শ্রীনগর উপজেলার পাটাভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রমিজ উদ্দিনের ছত্রছাঁয়ায় এসব জায়গা ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রমিজ উদ্দিনের ছোট ভাই মো. টুটুল ও জামাতা ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. সোহেল জায়গা ভরাট বাণিজ্য করছেন।
এর আগে গত আগস্ট মাসে শ্রীনগর-দোহার আঞ্চলিক সড়কের বাইপাশ এলাকায় কুশুরীপাড়া মৌজায় ২নং খতিয়ানের আরএস ৪১ ও ৬৭নং দাগে গণপূর্তের মালিকানা ১০৪ শতাংশ জমিতে অবৈধভাবে মাটি ভরাট করে। এনিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদ প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্টদের টনক নরে। ঘটনাস্থলে গণপূর্তের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ওই জায়গা নির্ধারণ করে অভিযুক্ত ভরাটকারীদের মাটি সরাতে বলেন। তবে গণপূর্তের বিভাগীয় উপ প্রকৌশলী নাজমুল হাসান হিরার এই নির্দেশনা প্রভাবশালী রমিজ উদ্দিন সিন্ডিকেট গ্রহন করেনি। জায়গার মাটি সরানো তো দূরের কথা এরই মধ্যে ভূমি সিন্ডিকেট মহলটি গণপূর্তের আনুমানিক ১০ কোটি টাকা বাজার মূল্যের জায়গা দখল করে পিছনের দিকে ফসলী জমি ভরাট কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। রমিজ উদ্দিনের খুঁটির জোড় কোথায়।
সরেজমিনে গিয়েও এর সত্যতা পাওয়া গেছে। লক্ষ্য করা গেছে, বাইপাশ মোড়ে সড়কের উত্তর পাশে গণপূর্তের জায়গার মাটি সরানো তো দূরের কথা বরং পরিপূর্ণভাবে ভরাট সম্পন্ন হয়েছে। এখন তার পিছনে বির্স্তীণ ফসলী জমি ভরাট করা হচ্ছে। অপরদিকে রমিজউদ্দিনের জামাতা সোহেল রীতিমত সড়কের পাশে স্থায়ীভাবে ড্রেজারের সাব-স্টেশন গড়ে তুলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক ব্যক্তি বলেন, সোহেল দীর্ঘদিন যাবত প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ড্রেজারে এ অঞ্চলে অসংখ্য ফসলী জমি ও জলাশয় ভরাট বাণিজ্যে করছেন।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলা প্রশাসন পর্যায়ক্রমে ড্রেজারটি বিচ্ছিন্ন করলেও রহস্যজনক কারণে সোহেল ড্রেজারটি ফের চালু করছে। ব্যস্ততম এলাকায় ড্রেজারের বিকট শব্দে জনসাধারণের ভোগান্তি হচ্ছে। এছাড়া সোহেল তার শ্বশুর রমিজউদ্দিনের এসব অবৈধ দখল কাজে সার্বিক সহযোগীতা করেন। এখন তার চাচা শ্বশুর টুটুল বেপারী যত্রতত্রভাবে ফসলী জমি ভরাট করছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কুশরীপাড়া মৌজায় ২নং খতিয়ানের আরএস মোট ১৪টি দাগে মোট সম্পত্তির পরিমান ১২ একর ২৫ শতাংশ। রেকর্ড অনুযায়ী এসবসম্পত্তির মালিক গণপূর্ত নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। অথচ ভূমি সিন্ডিকেট মহলটি সরকারের কোটি কোটি টাকা মূল্যের জায়গাগুলো অবৈধভাবে দখল করে চলেছে। ড্রেজার ব্যবসায়ী ও উপজেলা যুবলীগের সদস্য মো. সোহেলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণপূর্তের ওই জায়গায় আমরা নতুন করে মাটি ভরাট করিনি। কোন নোটিশ না পাওয়ায় জায়গার মাটি সরানোও হয়নি। পিছনের জায়গা অন্য কেউ ভরাট করছেন।
ড্রেজার বাণিজ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার ড্রেজারটি এখন বন্ধ আছে। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা নজরুল মেম্বার ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নুরুল ইসলাম পার্থর ড্রেজার চলছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। ঐখানে আমাদের কোন ড্রেজার নেই। আমি তাদেরকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে ওই জায়গা ভরাট না করার জন্য বলেছিলাম। তারা এখন ড্রেজার বাণিজ্যের অপবাদ দিয়ে আমার ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করনে। গণপূর্তের জায়গা ভরাট করার বিষয়ে পাটাভোগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী মো. রমিজউদ্দিন বেপারীর কাছে এ ব্যাপারে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
টুটুল বেপারী জানান, পিছনের জমিটি আমি ভরাট করছি। সামনে গণপূর্তের জায়গাটি বড় ভাই রমিজউদ্দিন ভরাট করেছে। আমার সাথে তার দ্বন্দ্ব থাকায় তিনি আমার জমিটিও এখন নিতে চাইছেন। ফসলী জমি ভরাটের কোন পারমিশন আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সুদত্তোর দিতে পারেননি। পাটাভোগ ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. ইউনুছ হোসেন টুটুলের সাথে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
গণপূর্ত বিভাগীয় পিডবিউডি (সাব-ডিভিশন) মুন্সীগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান হিরা এ বিষয়ে জানান, এর আগে ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে ভরাটকৃত জায়গার মাটি সরাতে বলা হয়েছিল। যেহেতু তারা আবার জায়গা ভরাট করছে বিষয়টি এখনই উধ্বর্তন কতৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
নিউজজি
Leave a Reply