‘এত শীতে মানুষ রিকশায়ও ওঠে না’

‘পেটের দায়ে তীব্র শীতে রিকশা লইয়া বেড় হইছি। সড়কে মানুষ কম। এত শীতে মানুষ রিকশায়ও উডে না। পাও দিয়া হাইট্টা গন্তব্যে যাইতাছে যাত্রীরা। রিকশার জন্য গ্যারেজ মালিকরে দিতে অইব সাড়ে ৪০০ টাকা। সারা দিনে কাজ করছি মাত্র ৩২০ টাকা। এখন মালিকের টাকাই দিমু, নাকি সংসার চালামু।’ কথাগুলো বলছিলেন, মুন্সিগঞ্জ শহরের হাট লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক তোফাজ্জল হোসেন (৬০)।

শুধু তোফাজ্জল হোসেন নন, এমন অবস্থা শহরের অন্যান্য রিকশাচালকেরও। তীব্র শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে কম বের হচ্ছে। ফলে আয় কমে গেছে রিকশাচালকদের। দিন আনে দিন খায় মানুষেরা অনেকটাই কর্মহীন হয়ে অভাবে পড়েছেন।

আজ রোববার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুন্সিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, চিরচেনা শহর শীতে জবুথবু হয়ে আছে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। প্রতিদিন যে স্থানগুলো মানুষের কোলাহলে মুখর থাকত, শীতের কারণে সেসব এলাকা অনেকটাই মানুষশূন্য। তবে প্রতিটি স্ট্যান্ড, শহরের অলিগলিতে প্রতিদিনের মতো রিকশাচালকেরা যাত্রীর আশায় বসেছিলেন।

রোববার বিকেলে উত্তর ইসলামপুর এলাকায় রিকশা নিয়ে বসেছিলেন চালক মো. কালাম। এই প্রতিবেদককে দেখতেই অনেকটা অসহায়মুখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কোথায় যাবেন মামা?’ এ সময় কথা হয় কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে তীব্র শীত। রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হয়। তারপরও রিকশা নিয়ে বসে আছি। তিন দিন ধরে ক্ষেপ একেবারে কম। আগে প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা কাজ হতো। গ্যারেজ খরচ ৪০০ টাকা দিয়ে পাঁচজনের সংসার কোনোরকম চলত। এখন সংসার চালাচ্ছি ধারদেনা করে।’

শহরের কাটাখালী এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মো. হাসান বলেন, ‘যাঁদের টাকা আছে, দুই-চার দিন কাজ না করলেও তাঁদের অসুবিধা নেই। আমরা তো দিন আনি দিন খাই। আমাদের কাছে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়-তুফান, শীত বলতে কোনো কিছু নেই। পেটের ক্ষুধা এসব বোঝে না। শীতের মধ্যে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। সড়কে এসে কোনো ক্ষেপ পাচ্ছি না।’

কয়েকজন যাত্রী জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেশি শীত পড়েছে। এত শীতে বাইরে বের হলেই হাত-পা জমে যায়। প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসা হয় না। রিকশায় উঠলে বাতাসে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাই শীত এড়াতে রিকশায় না উঠে ছোট গন্তব্যের জায়গাগুলোতে পায়ে হেঁটেই যাতায়াত করছেন তাঁরা।

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.