অভাবে নবজাতক বিক্রি করতে যাচ্ছিলেন মা, দায়িত্ব নিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী

সংসারে অভাব। তার মধ্যে জন্ম নিয়েছে নবম সন্তান। ওই নবজাতকের ওষুধ, হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ দিচ্ছিলেন না প্রসূতির স্বামী। এমনকি হাসপাতালেও আসেননি তিনি। ওই নারীর একার পক্ষেও এই টাকা জোগাড় করা কঠিন। এসব কারণে ওই প্রসূতি তাঁর দুই দিন বয়সী বাচ্চাকে এক লাখ টাকায় অন্যের কাছে বিক্রির বন্দোবস্ত করেন। এ খবর পাওয়ামাত্র সেই নবজাতকের চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব দায়িত্ব নেন হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মহিলা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেত্রী।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার জামালদি এলাকার ঘটনা এটি। প্রসূতি ওই নারীর নাম রাশিদা বেগম। তিনি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের দিমাতলী এলাকার হবি মিয়ার স্ত্রী। এই দম্পতি গজারিয়ার তেঁতুলতলা বস্তি এলাকায় ভাড়া থাকেন। হবি মিয়া রিকশা চালান, আর রাশিদা বেগম বিয়ের অনুষ্ঠানে, মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। হবি মিয়া ও রাশিদা বেগম দুজনের দ্বিতীয় বিয়ে এটি।

নবজাতটি বিক্রি হতে দেননি গজারিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনা আক্তার। শনিবার সন্ধ্যায় মায়ের বুকে সন্তানকে ফিরিয়ে দেন তিনি ছবি: প্রথম আলো

গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাশিদা বেগম স্থানীয় নাজমা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছেলেসন্তানের জন্ম দেন। আজ শনিবার সন্ধ্যায় নবজাতকটিকে বিক্রির হাত থেকে রক্ষা করে হাসপাতালের খরচ মওকুফ এবং মা ও শিশুর যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নিয়েছেন গজারিয়া উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনা আক্তার।

সংসারে খুব অভাব। এ বাইচ্চা হওনে আমার স্বামী খুশি অয় নাই। ওষুধ কিনার টেকা নাই। হাসপাতালের সিজার খরচ দিতে পারছিলাম না। খুব দুঃখে বাচ্চাডা বেইচ্চা দেওনের সিদ্ধান্ত নিছিলাম। হাসপাতালের বড় আপায় সন্তান বিক্রি করতে না করছে। আমাগো মা-পোলার সবকিছুর দায়িত্ব নিছে। আমিও আমার সন্তান বেচতে চাই না।….রাশিদা বেগম

হবি মিয়ার আগের স্ত্রী মারা গেছেন, ওই সংসারে চার ছেলেমেয়ে রয়েছে। রাশিদা বেগমের আগের সংসারে বিচ্ছেদ হয়েছে, সেখানে একটি সন্তান রয়েছে। সে রাশিদার সঙ্গেই থাকে। হবি মিয়ার সংসারে সদ্যোজাত সন্তানসহ তাঁর চার ছেলেমেয়ে হয়েছে।

রাশিদা বেগম জানান, তাঁর স্বামী রিকশা চালিয়ে আর তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোরকমে ১০ জনের সংসার চলছিল। এর মধ্যে আরেকটি সন্তান চলে আসে। সন্তান পেটে নিয়েই তিনি বিভিন্ন জায়গায় কাজে যেতেন। গতকালও একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে মসলা বাটার কাজে গিয়েছিলেন। সেখানে হঠাৎ পেটে ব্যথা শুরু হয় এবং রক্তক্ষরণ হতে থাকে।

রাশিদা বলেন, ‘সংসারে খুব অভাব। এ বাইচ্চা হওনে আমার স্বামী খুশি অয় নাই। আমারে তালাক দিবে কইছে। হাসপাতালে ওষুধ কিনার টেকা নাই। হাসপাতালের সিজার খরচ দিতে পারছিলাম না। খুব দুঃখে বাচ্চাডা বেইচ্চা দেওনের সিদ্ধান্ত নিছিলাম। হাসপাতালের বড় আপায় সন্তান বিক্রি করতে না করছে। আমাগো মা-পোলার সবকিছুর দায়িত্ব নিছে। আমিও আমার সন্তান বেচতে চাই না।’

রাশিদার স্বামী হবি মিয়ার বক্তব্য জানার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনা আক্তার বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। টাকার অভাবে একজন মা তাঁর সন্তানকে বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। আমি জানতে পেরে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে এসে তাঁকে সাহস দিই। হাসপাতালের কোনো খরচ লাগবে না বলে জানাই। সেই সঙ্গে বাচ্চা ও বাচ্চার মায়ের জন্য এই দুঃসময়ে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। অভাবের কারণে এমনটা যেন কারও জীবনে না হয়।’

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.