আসন্ন সংসদ নির্বাচনে চৌধুরীবাড়ির দুর্গ ভাঙতে তোড়জোড়

জাতীয় সংসদে মুন্সীগঞ্জের নির্বাচনী আসন তিনটি। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ-১ (সিরাজদিখান-শ্রীনগর) বিএনপি কিংবা সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে চৌধুরী পরিবার এই আসনটিতে তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে বহাল তবিয়তে।

মুন্সীগঞ্জ-১ আসন মানেই যেন চৌধুরীবাড়ির ঘাঁটি। ৩২ বছরে মাত্র দু’বার পালাবদল হয় এই আসনটিতে। এরপর আবার ঘাঁটির দখল নেয় এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ছেলে বিকল্পধারা বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী।

১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সেই ধারা অব্যাহত রাখেন ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও। তবে ২০০১ সালের নভেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর তার ছেলে মাহী বি চৌধুরী বিএনপি থেকে ২০০২ সালের উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে বাবার স্থলাভিষিক্ত হন মাহী। কিন্তু পরবর্তীতে দলীয় আন্তঃকোন্দলে পিতা-পুত্র বিএনপি থেকে বের হয়ে গঠন করেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে আলাদা দল। দুই বছর পর ২০০৪ সালে আবারও উপনির্বাচন হয় এই আসনে। এবারও মাহী বি চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে মহাজোটের সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট একীভূত হলে নির্বাচনে অংশ নেন। মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন মাহী বি চৌধুরী।

২০০৮ সালে বিএনপি ও বিকল্পধারা উভয় দলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুকুমার রঞ্জন ঘোষের নিজের অবস্থান ধরে রেখে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে সার্বিকভাবে চৌধুরীবাড়ির শক্ত অবস্থা পেরুতে পারেনি কেউই। কোনো না কোনোভাবে এই আসনটি তাদের দখলেই চলে আসে বারংবার।

এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চৌধুরীবাড়ির গণ্ডি ভাঙার তোড়জোড় শুরু করেছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সেই দৌড়ে পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টিও।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা চাইছেন এবার দল থেকেই যেন যোগ্য কোনো নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে মাহী বি চৌধুরী আবার নৌকা প্রতীক পান, তা চাচ্ছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এলাকায় কম উপস্থিতি ও এলাকার উন্নয়নে মাহী বি চৌধুরী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই বলে দাবি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের। গতবার দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তাদের মধ্যে।

এদিকে শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে গড়ে তোলার চেষ্টার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় সভা, উঠান বৈঠক, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সর্বস্তরের জনগণের সঙ্গে একটা সুসম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হবে এই আসনে যেন আওয়ামী লীগের কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এদিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন শ্রীনগরের সন্তান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সারোয়ার কবীর, আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও বিক্রমপুর ভূঁইয়া মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সুব্রত সরকার, সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন।

অন্যদিকে বিএনপিও মরিয়া তাদের সাজানো বাগান পুনরুদ্ধারে। বর্তমান মুন্সীগঞ্জ-১ আসন মানেই বিএনপির স্বপ্নের বাগান ভেঙে যাওয়ার ইতিহাস। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বি চৌধুরী দল থেকে বেরিয়ে যাওয়া পর থেকেই যেন এই বাগিচায় মড়ক লেগেছে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই অঞ্চলকে বিএনপির ঘটি হিসেবে ফিরিয়ে আনতে মনোনয়ন চাইবেন সিরাজদিখান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ আব্দুল্লাহ ও বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু।

তাছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মুন্সীগঞ্জ জাতীয় পার্টির জেলা আহ্বায়ক শেখ সিরাজুল ইসলাম ও সদস্যসচিব মো. জানে আলম।

আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম সারওয়ার কবীর বলেন, গত চার বছরে আমি ছাড়া আর কেউ নির্বাচনী এলাকায় কাজ করেননি। আমি আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলছি, এবার আমি মনোনয়ন পাব। তবে আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে তার সঙ্গে আমরা থাকব। জোটগত কারণে গতবার যাকে সংসদ সদস্য করা হয়েছিল, তাকে এবার আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে বলে মনে করেন তিনি।

ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু বলেন, আমি আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করি। দেশের জন্য কাজ করি। মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে আমি উদ্বিগ্ন নই। মনোনয়ন পেলে ভালো, না পেলেও কোনো সমস্যা নেই। গতবার আমি মনোনয়ন পাইনি। কিন্তু তারপরেও আমার জনসেবা করা থেমে থাকেনি। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করে যাবো।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মুখ খুলতে নারাজ। তবে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীরা জানান, যদি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তাহলেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে। পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তেমন সময় লাগবে না বলেও দাবি তাদের।

আগামী জাতীয় সংবাদ নির্বাচন বিষয়ে বক্তব্য নিতে বেশ কয়েক বার মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও মাহী বি চৌধুরীর মন্তব্য জানা যায়নি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর বাকি এক বছর। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর নড়াচড়া। সভা-সমাবেশের, বিক্ষোভ-প্রতিবাদসহ নানা কর্মসূচি মধ্যদিয়ে স্ব স্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে সময় পার করছে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

ঢাকা মেইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.