সিরাজদিখানে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি স্বামী

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে মোকসেদুর রহমানকে (৪০) হাত-পা বেঁধে হত্যা করে ইছামতি নদীতে ফেলে দেন তার স্ত্রীর প্রবাসী প্রেমিক জাহিদ সরকার। এ ঘটনায় অভিযুক্ত স্ত্রী আসমা বেগমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করে সোমবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।

আসমা বেগমকে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে গ্রেপ্তার করে সিরাজদিখান থানা পুলিশ। গত ১৭ জানুয়ারি সকাল ১০টার দিকে সিরাজদীখান উপজেলার চিত্রকোর্ট ইউনিয়নের বরাম বাজার সংলগ্ন ইছামতি নদীর তীর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয় যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসমা বেগম

অন্যদিকে নিহতের স্ত্রী আসমা বেগম তার স্বামী নিখোঁজ- মর্মে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। সাধারন ডায়েরি ও যুবকের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে পুলিশের তদন্তে যুবকের পরিচয় উঠে আসে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২২ বছর আগে ঢাকার গেন্ডাারিয়া এলাকার মৃত মো. হাবিবুল্লাহর ছেলে মোকসেদুর রহমানের সঙ্গে বরিশালের বাবুগঞ্জ থানার ঠাকুর মল্লিক গ্রামের মৃত লতিফ শিকদারের মেয়ে আসমা বেগমের বিয়ে হয়। তাদের ২২ বছরের সংসার জীবনে তিন ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে আসমা বেগমের সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের আনোয়ার সরকারের ছেলে সৌদি প্রবাসী জাহিদ সরকারের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মোকসেদুর রহমানকে বিদেশে পাঠানোর আশ্বাস দেন জাহিদ। জাহিদ নিজ খরচে মোকসেদুর রহমানকে পাসপোর্টও তৈরি করে দেন। এর মধ্যে তাদের সম্পর্ক আরও গভীর হয়।

এদিকে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে গত ৩ জানুয়ারি মোকসেদুরকে তার স্ত্রী আসমা সিরাজদিখানের জাহিদের কাছে পাঠান। নিজে থেকে যান গেন্ডারিয়ায়। মোকসেদুর সিরাজদিখান উপজেলার কালীপুর গ্রামে জাহিদের বাড়িতে আসলে রাতে তাকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান জাহিদ। পরে দুই জনের সহযোগিতায় জাহিদ তাকে হত্যা করে হাত-পা বেঁধে মরদেহ নদীতে ফেলে দেন। এ ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য মোকসেদুরকে হত্যা করেই জাহিদ ১১ জানুয়ারি সৌদিতে চলে যান। পরে ১৭ জানুয়ারি মোকসেদুরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ব্যাপারে মুন্সীগঞ্জ কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর জামালউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আটক আসমা বেগম মুন্সীগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে একটি চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উন্মেচিত হলো।

সিরাজদিখান থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম মিজানুল হক জানান, পরিচয় পাওয়ার পর মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা নতুন মোড় নেয়। তদন্ত চলাকালে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। রোববার রাতে নিহতের স্ত্রী আসমা বেগমকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হয়।

ব.ম শামীম/আরএআর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.