মুন্সীগঞ্জে তৈরি ঘর বিক্রিতে সুদিন ফিরেছে

মামুনুর রশীদ খোকা: ইট-সিমেন্টের তৈরি পাকা ঘরের এ যুগে কাঠ টিনের তৈরি ঘরের জনপ্রিয়তা এখনো রয়ে গেছে মুন্সীগঞ্জে। এসব টিনের তৈরি রেডিমেড ঘরও বিক্রি হয় এ জেলায়। রেডিমেড এসব ঘরে থাকে নান্দনিকতার ছোঁয়া। একতলা, দোতলা আর তিনতলাবিশিষ্ট এসব ঘরের অপূর্ব নির্মাণশৈলী নজর কাড়ে যে কারও। জেলা সদর, শ্রীনগর, টঙ্গীবাড়ি ও লৌহজং উপজেলার শতাধিক স্থানে তৈরি হচ্ছে এসব রেডিমেড ঘর। করোনার ধকলে গেল তিন বছর এসব রেডিমেড ঘর বিক্রিতে মন্দা দেখা গেলেও বর্তমানে তা কাটিয়ে উঠে সুদিন দেখছে ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের কাছে কদর বেড়েছে এ ঘরের।

জানা যায়, ৩০ থেকে ৩৫ বছর আগে মুন্সীগঞ্জে রেডিমেড ঘর বিক্রি শুরু হয়। সে সময় জেলার লৌহজং উপজেলার ঘোড়দৌড় ও সদর উপজেলার বজ্রযোগিনীতে এ ঘর বিক্রির ব্যবসা গড়ে ওঠে। দিনে দিনে এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বর্তমানে জেলা সদরের চূড়াইন, রামপাল, চরকেওয়ার, বন্দর নগরী মীরকাদিম; টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং, বেতকা, আউটশাহী, আড়িয়ল, কামারখাড়া, দীঘিরপাড়; শ্রীনগর উপজেলার বেজগাঁও, দাইসা, বালাশুর এবং লৌহজং উপজেলার খলাপাড়া, বেজগাঁও ও মালির অঙ্ক গ্রামেও রেডিমেড ঘর বিক্রি হয়। এ ছাড়া মুন্সীগঞ্জ ছাপিয়ে এসব রেডিমেড ঘরের জনপ্রিয়তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকার দোহার, কুমিল্লা, খুলনা, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায়।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত দেড় লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয় এসব ঘর। আবার কেউ কেউ তার পছন্দমতো রেডিমেড ঘর তৈরি করে নিয়ে যান। এ ক্ষেত্রে ১৫ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ পড়ে। একেকটি রেডিমেড ঘরের ৬০ বছর থেকে শতবছর পর্যন্ত স্থায়িত্ব হয়ে থাকে। ঘর তৈরির কাঠমিস্ত্রিদের বেশিরভাগই গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী থেকে আসা। একেকজন মিস্ত্রি মাসে ১০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকেন। থাকা-খাওয়া মালিকপক্ষের। একেকটি প্রতিষ্ঠানে ১০-১৫ জন করে কাঠমিস্ত্রি কাজ করে থাকেন। ঘর তৈরিতে টিনের সঙ্গে বার্মার লোহাকাঠ ও শালকাঠের ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে বার্মার এ কাঠের দাম বেশি পড়ায় নাইজেরিয়ান লোহা ও সেগুনকাঠের ব্যবহারও বেড়েছে। তাছাড়া দেশীয় কাঠেও তৈরি হয়ে থাকে রেডিমেড এসব ঘর।

মুন্সীগঞ্জে তৈরি এসব রেডিমেড ঘর ব্যবসায়ীরা পাইকারিভাবেও কিনে নিয়ে যান। পরে তারা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় খুচরা বিক্রি করেন। স্থানীয় খুচরা ক্রেতাদের মধ্যে প্রবাসী পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ঘর কেনেন।

গোপালগঞ্জ থেকে আসা কাঠমিস্ত্রি উত্তম দাস বলেন, ‘একেকটি ছোট ও মাঝারি আকারের ঘর তৈরি করতে কাঠমিস্ত্রিদের ১৫ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। আর দোতলা ও তিনতলা বড় আকারের ঘর তৈরিতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই মাস।

জেলা সদরের বজ্রযোগিনী গ্রামের ঘর বিক্রির প্রতিষ্ঠান সততা বিতানের স্বত্বাধিকারী সাকিব আহমেদ বলেন, ‘করোনা মহামারীর কারণে ঘর বিক্রি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে এখন ঘর বিক্রি বেড়েছে। রড-সিমেন্টের দাম বাড়ার কারণে রেডিমেড ঘরের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ক্রেতাদের। তাছাড়া এসব ঘর কিনে সহজেই অন্যত্র নিয়ে স্থাপন করা যায়।’

সদরের চূড়াইন গ্রামের ঘর বিক্রির প্রতিষ্ঠান সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করোনায় বিক্রি বন্ধ থাকলেও এখন রেডিমেড ঘরের চাহিদা অনেক বেড়েছে। প্রতি মাসে কম করে হলেও ১০টি ঘর বিক্রি করে থাকি।’

বজ্রযোগিনী গ্রামের ব্যবসায়ী মো. সেলিম বলেন, ‘দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। নানা ব্যবসাই করেছি। লাভের মুখ দেখিনি। শেষে রেডিমেড ঘর বিক্রির ব্যবসা খুলি। বর্তমানে ঘর বিক্রি করে ভালোই আছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.