কাজে আসছে না ঘাটলাটি

নদীর তীরঘেঁষা দাঁড়িয়ে থাকা ঘাটলাটি মাটি থেকে প্রায় ৭ ফুট উঁচুতে। এটি ব্যবহারের কোনো উপায় নেই।
নদীর নাম ফুলদী। এই নদী পারাপারে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছর আগে একটি ঘাটলা নির্মাণ করা হয়। তবে ঘাটলায় ওঠার জন্য নির্মাণ করা হয়নি সংযোগ সড়ক। ফলে এক দিনের জন্যও স্থানীয়দের কাজে আসেনি এই ঘাটলা। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের মুসলিমনগর গ্রামে ফুলদী নদীর পাড়ে এ ঘাটলাটি অবস্থিত। গ্রামটির ২৫-৩০টি পরিবারের কাজের সুবিধার জন্য এ ঘাটলা নির্মাণ করা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর তীরঘেঁষা দাঁড়িয়ে থাকা ঘাটলাটি মাটি থেকে প্রায় ৭ ফুট উঁচুতে। পাশের কাঁচা রাস্তা থেকে ঘাটলা পর্যন্ত প্রায় ২০ ফুট জায়গার মধ্যে কোনো সংযোগ সড়ক নেই। ফলে স্থানীয় লোকজন তাঁদের প্রয়োজনে ঘাটলাটি ব্যবহার করতে পারছেন না।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি পাকা ঘাটলার। নদীর পানিতে গোসল ও গৃহস্থালির কাজ করার জন্য ঘাটলাটি খুব দরকার ছিল। মুসলিমনগর নদীর পাড়ে এমন একটি জায়গায় ঘাটলা বানানো হলো, যা গ্রামের জন্য জুতসই নয়। তার ওপর ঘাটলা ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়নি কোনো সংযোগ সড়ক। ফলে কোনো কাজে আসছে না ঘাটলাটি।

* ২৫-৩০টি পরিবারের কাজের সুবিধার জন্য এ ঘাটলা নির্মাণ করা হয়। * পাশের রাস্তা থেকে ঘাটলা পর্যন্ত প্রায় ২০ ফুটের মধ্যে কোনো সংযোগ সড়ক নেই।
ঘাটের ফলক ও জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জ জেলা পরিষদের অধীনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সর্বসাধারণের জন্য দুই লাখ টাকা ব্যয়ে ঘাটলাটি নির্মাণ করা হয়। মেসার্স মালিহা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজের দায়িত্ব পায়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ঠিকাদার জেলা পরিষদকে ঘাটলা বুঝিয়ে দেন। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর এটি উদ্বোধন করা হয়।

এলাকাবাসীর চাওয়া, ঘাটলাটি ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য দ্রুত সংযোগ সড়ক করে দিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্য মর্জিনা বেগম ঘাটলা নির্মাণের সভাপতি ছিলেন। এমন ঘাটলা থাকা না–থাকা সমান। বিষয়টি ইতিমধ্যে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।

তবে সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য ও প্রকল্পটির সভাপতি মর্জিনা বেগমের দাবি, যে বছর ঘাটলাটি উদ্বোধন করা হয়, তখন ঘাটলায় ওঠার জন্য বালুর বস্তা ফেলা হয়েছিল। তবে বর্ষায় সে বালুর বস্তা নদীতে চলে গেছে। এরপর সেখানে আর কোনো কিছুই দেওয়া হয়নি।

মুসলিমনগর এলাকার বাসিন্দা হাবিব প্রধান বলেন, ঘাটলা ঠিকই বানিয়েছে, তবে গ্রামের মানুষের এক দিনের জন্যও কোনো কাজে আসেনি। ঘাটলায় ওঠার রাস্তা নেই। শুকনা মৌসুম বা বর্ষা মৌসুম কখনো এ ঘাটে ওঠা যায় না। এমন ঘাটলা বানিয়ে শুধু সরকারের টাকার অপচয়ই হয়েছে।

সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি আক্ষেপের সঙ্গে বলেন, এমন ঘাটলা বানানো হলো যে উঠতে হলে মই দরকার। জনগণ যদি এই ঘাটলাটি ব্যবহারই করতে না পারে, তাহলে কাদের স্বার্থে সরকারি টাকা খরচ করে এটা বানানো হলো।

বালিয়াকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহীদুজ্জামান জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাকে না জানিয়ে জেলা পরিষদ থেকে ঘাটলাটি করা হয়েছে। ঠিক জায়গায় ঘাটলা করা হয়নি। এ কারণে ঘাটলাটি মানুষের কোনো কাজে আসছে না। এক সপ্তাহ আগে আমি দেখে এসেছি। কীভাবে ঘাটলাটি ব্যবহারের উপযোগী করা যায়, সে বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে নিয়ে আলোচনা করব।’

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.