মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের ৫০ নেতা বিবাহিত, ২০ জন বিদেশে

সুমিত সরকার সুমন: মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছে প্রায় সাত বছর আগে। মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কোনও কমিটি গঠন করা হয়নি। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে সংগঠনের কার্যক্রম। জেলা কমিটির পাশাপাশি সদর উপজেলা ও শহর এবং অন্যান্য পাঁচ উপজেলা কমিটির একই অবস্থা।

এরই মধ্যে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট জেলা কমিটির প্রায় ৫০ নেতা বিয়ে করেছেন। পাশাপাশি ২০ নেতা কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। তাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা সংগঠনের গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে বিয়ে করেছেন। তার বিরুদ্ধে থানায় কয়েকটি মামলা রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহম্মেদ পাভেলের বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ।

তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, সদর উপজেলা ছাত্রলীগ, সরকারি হরগঙ্গা কলেজ শাখা ছাত্রলীগ, পৌর ছাত্রলীগ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত বছর আগে। এসব কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতা বিবাহিত।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি মহসিন রেজা, নিবির আহমেদ, আলমগীর হোসেন, আওলাদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ হাসান, মেহেদি হাসান রবিন, সেলিম ব্যাপারি, সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান রুবেল, সদর উপজেলা সভাপতি সুরুজ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসানসহ প্রায় ৫০ নেতা বিয়ে করেছেন।

এদিকে, জেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে থেকে প্রবাসে রয়েছেন সহ-সভাপতি মির্জা আরিফ, শাহাদাত হোসেন, সহ-সভাপতি রিংকু সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাকিন ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীমসহ ২০ নেতা।

লৌহজং উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অয়ন হোসেন ব্যাপারি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বয়স ২৯ বছরের নিচে ছিল। তারা সেসময় অবিবাহিত ছিলেন। ইতোমধ্যে তারা বিয়ে করেছেন। তবে আনুষ্ঠানিকতা হয়নি।’

টঙ্গীবাড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খালিদ হোসেন খান বলেন, ‘২০১৯ সালের ৩১ জুলাই আমাদের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। উপজেলার সাধারণ সম্পাদক বিয়ে করেছেন। এরই মধ্যে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দিয়েছি কেন্দ্রে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পাওয়ার আগে একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিতে অনুরোধ করেছিলাম। দুই বছর হয়ে গেলেও এখনও অনুমোদন পায়নি।’

নেতাদের বিয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বিবাহিত, তারা কী ব্যবস্থা নেবেন? জেলা ছাত্রলীগের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নেতাকর্মী বিবাহিত। আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু নেননি। তিন থেকে সাড়ে তিন বছর জেলা কমিটির কোনও প্রোগ্রাম হয়নি। আন্দোলন বলেন বা মিছিল, কিছুই হয়নি। আমাদের দাবি, জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি।’

আমি বিবাহিত, পদ পাওয়ার পর বিয়ে করেছি জানিয়ে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুরুজ মিয়া বলেন, ‘আমার পদ চলে গেলে যাক, এটা কোনও বিষয় না। সদর উপজেলা কমিটি হয়েছে ৯ বছর হয়ে গেছে। আমরা চাই, সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি আসুক। নতুনরা সুযোগ পাক।’

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ পাভেল বলেন, ‘সাংগঠনিক মেয়াদ প্রায় শেষ। ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় আমি বিষয়টি জানিয়েছি। নেতারা বলেছেন, নতুন কমিটি দেবেন। কমিটির কেউ কেউ কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন, কেউ চাকরি করছেন।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল মৃধা বলেন, ‘জেলা কমিটির ২০ নেতা বিদেশে, বিয়ে করেছেন ১০-১২ জন। ৫০ জন বিয়ের তথ্য আমার কাছে নেই। কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় এসব বিষয় উপস্থাপন করেছি। তারা আমাদের কোনও সিদ্ধান্ত দেননি, বলেছেন পরে জানাবেন।’

নেতাকর্মীরা বলেছেন আপনিও বিবাহিত—এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়সাল মৃধা বলেন, ‘আমি বিয়ে করিনি। বিয়ের কাবিননামা থাকলে নেতাকর্মীরা দেখাক।’

জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ‘আমি ২০১৫ সালের ২৫ মে জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন করে বিদায় নিই। নিয়মতান্ত্রিক সম্মেলন না হলে সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এই কমিটির মেয়াদ প্রায় সাত বছর হয়ে গেছে। এখন কোনও কমিটি যদি সাত বছর থাকে, তাহলে স্থগিতই হবে। ছাত্রলীগের সভাপতির লেখাপড়া শেষ, আবার বিয়ে করেছেন। জেলা, শহর ও সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতা বিয়ে করেছেন, এমনকি সন্তানের বাবাও হয়েছেন কেউ কেউ। তাই আমার মনে হয়, তারাও সম্মেলন থেকে বিদায় নিতে চায়। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি এলে সংগঠনের কার্যক্রম চাঙা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান মুঠোফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা দুঃখজনক। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো। মেয়াদোত্তীর্ণ যেসব কমিটি সারা দেশে রয়েছে, সেগুলোকে আমরা নতুন করে সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করবো।’

বাংলা ট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.