শ্রীনগরে পদ্মার চরে প্রায় ৫শ’ বিঘা জমিতে ভুট্রা চাষ, অবগত নয় স্থানীয় ভূমি

শ্রীনগরে পদ্মার চরে প্রায় ৫শ’ বিঘা জমিতে ভুট্রার চাষাবাদ হলেও এ ব্যাপারে জানেন না স্থানীয় ভূমি অফিস। এতে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট চাষীরা বলছেন জমির মালিকদের কাছ থেকে এগ্রিমেন্টে ভুট্রার চাষ করছেন তারা। চরের জমির মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে সংশ্লিষ্ট ভুট্রা চাষীরা বলেন খুব শীঘ্রই জমির মালিকদের পক্ষে কোর্টের রায় আসবে।

উপজেলার ভাগ্যকুলের দক্ষিণ কামারগাঁও এলাকার কাউছার খান ও মো. সবুজ আলাদা আলাদাভাবে চরের বির্স্তীণ ভূমিতে ভুট্রার চাষ করছেন। জানা গেছে, গো-খাদ্য হিসেবে এসব ভুট্রার আবাদ করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে চরের বিস্তর ভূমিতে এসব ভুট্রাসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদে নামধারি জমির মালিকরা অর্থিকভাবে লাভবান হলেও সরকার তার কাঙ্খিত রাজস্ব পাচ্ছেনা।

ভুট্রা চাষী কাউসার খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চরে জমির মালিকদের কাছ থেকে বিঘাপ্রতি ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় জমি এগ্রিমেন্ট নিয়েছি। চরের জমি ব্যক্তি সমালিকানা কিভাবে হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মালিকরা বলছেন তারা খুব শীঘ্রই আদালতের রায় পাবেন। জেলার লৌহজংয়ের এক ডেইরী ফার্ম মালিক পক্ষের কাছ থেকে অগ্রিম ১৮ লাখ টাকা নিয়ে চরে ভুট্রার চাষ করছেন বলেন তিনি। অপর ভুট্রা চাষী মো. সবুজের সাথে এব্যাপারে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাক্ষাত পাওয়া যায়নি।

সরকারি আইনে বলা আছে, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির এক আদেশ বলে উক্ত ৮৬ ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করেন। যার বলে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া জমির মালিক সব অধিকার হারাবেন। খাজনা পরিশোধ করতে হবে না। এসব জমি ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণ যোগ্য। ১৯৭২ সালের প্রেসিডেন্টের আদেশ নং ১৩৭ বলবৎ হওয়ার পূর্বে যদি কোন ব্যক্তি দাবী করে কোন আদালতে মামলা থাকে তাহলে অত্র প্রেসিডেন্টের আদেশ বলবৎ হওয়ার পর সাগর বা নদী সরে যাওয়ার ফলে জেগে উঠা জমি নিয়ে আর নতুন করে কোন আদালতে মামলা করা যাবে না। ১৯৫০ সালের স্টেট একুইজিশন এন্ড টেনান্সি এক্ট’র ৮৭ ধারায় নদী বা সাগর সরে যাওয়ার ফলে যদি কোন জমি জেগে উঠে তাহলে জমির পুর্বের মালিক সেই জেগে উঠা জমির মালিকানা দাবী করতে পারবে না। কারণ উক্ত জমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের হাতে অর্পিত হবে এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।জমি হয়ে যায় খাস।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার ভাগ্যকুল ইউনিয়নের কামারগাঁও পদ্মার নদীর তীরবর্তী এলাকার পদ্মার চর নামক বির্স্তীণ ভূমিতে ভুট্রার পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ করা হচ্ছে। অথচ একটি সংঘবদ্ধ দল রেকর্ডবলে চরের ভূমি মালিকানা দাবি করে আসছে। সিন্ডিকেট চক্রটি বিভিন্ন সময়ে চরের মাটি বিক্রিসহ অবৈধভাবে চরের জমিতে ভুট্রা চাষ করে নিজেদের ফায়দা লুফে নিচ্ছে। মাঝে মধ্যেই সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের সাথে জমি দখল ও ভাগভাটোয়ারা নিয়ে হামলা-মামলার মত ঘটনাও ঘটে থাকছে। একটি সূত্র জানায়, সঠিক নজরদারীর অভাবে গত কয়েক বছর যাবত একটি মহল গো-খাদ্য হিসেবে চরের বিশাল এলাকা জুড়ে ভুট্রার চাষ করে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

স্থানীয়রা জানায়, ২০০৫ সালের দিকে ভাগ্যকুলসহ আশপাশের এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পুনরায় চর দখলে একটি মহল নানা কৌশলে চরের ভূমি দখলে তৎপর হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকেট মহলটি বিভিন্ন অজুহাতে কৃষকদের নাম ভাঙ্গিয়ে চরের জমি দখল করে ফায়দা লুফে নিচ্ছে।পূর্বের রেকর্ডিয় কাগজপত্র জাল-জালিয়াতি করে কৌশলগত কারণে চরে ভুট্রা, সরিষাসহ অন্যান্য ফসলের আবাদেও নামে ভূমি দখলে রাখছেন। কদিন পরেই চরে উৎপাদিত প্রতি টন কাঁচাভুট্রার গাছ ৫ হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হবে সংশ্লিষ্ট খামারীদের কাছে। ভুট্রার সেলাইস বাণিজ্যে চক্রটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে যাচ্ছে। অথচ স্থানীয় প্রান্তিক কৃষক বা ভূমিহীনরা চরের ভূমির এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভূমি দখলদাররের মধ্যে সিংহভাগই ব্যক্তিই কৃষি পেশার সাথে যুক্ত নন। সচেতন মহল মনে করছেন, স্থানীয় ভূমি অফিসের সঠিক তদারকীর অভাবে চরের ভূমি থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। দখলদার শ্রেণিটি এলাকায় বিভিন্নভাবে অপপ্রচার করে বেড়ায় খুব শীঘ্রই আদালত থেকে তারা রায় পেতে যাচ্ছেন।

ভাগ্যকুল ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (ইউ.এল.এস.এ.ও) রাজেশ খানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কিছুদিন হলো এখানে কাজে যোগদান করেছি। চরে ভুট্রা চাষের বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। চরের সুনিদিষ্ট লোকেশন দিন সরেজমিন যাবো। এ বিষয়ে উধ্বর্তন স্যারকে অবহিত করবো।

গ্রামনগর বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.