প্রবাস থেকে আসা যাত্রীরা তাদের টার্গেট। সড়কে গাড়ি আটকে তারা হাতিয়ে নেন সব কিছু। তবে এতে কেউ প্রতিবাদ করলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাকে। আন্ত জেলা ডাকাতদলের দুর্ধর্ষ এমনই পাঁচ সদস্য চাঁদপুরে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাড়ি, বিভিন্ন অস্ত্র ও লুণ্ঠিত মালামাল।
আজ রবিবার বিকেলে চাঁদপুরের আদালতে তোলা হয় ডাকাতদলের ওই পাঁচ সদস্যকে। সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন তারা। পরে আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে পাঠানো হয় তাদের।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানান, এলাকার সবাই জানেন লিটন মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে থাকেন। কিন্তু না, চাঁদপুর-কুমিল্লা ও মুন্সীগঞ্জে জেলার একদল ডাকাত নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। রাতের অন্ধকারে তার নেতৃত্বে অভিযান শুরু হয়। তাদের টার্গেট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রামের বাড়িতে ফেরা প্রবাসীরা।
তিনি আরো জানান, সড়কপথে প্রবাসফেরত মানুষের পথরোধ করে তারা ছিনিয়ে নেন সব কিছু। লুণ্ঠিত এসব মালামাল চলে যায় কুমিল্লার দাউদকান্দির কাউদিয়া গ্রামের রোমানের বাড়িতে। সেখানে মালামাল ভাগাভাগি না হলেও ডাকাতিতে অংশ নেওয়া সদস্যদের নগদ টাকায় পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হয়।
লিটনের সহযোগী ও ডাকাতদলের সদস্য শাহ পরান জানান, চাঁদপুরের কচুয়া থানার তেতৈয়া গ্রামের লিটনের নেতৃত্বে চলে সড়কপথে ডাকাতি। প্রতিটি অভিযানের ভিত্তিতে পারিশ্রমিক মেলে তার মতো অন্য সদস্যদের। তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় তাকে।
তিনি আরো জানান, এলাকার সবাই জানে লিটন মধ্যপ্রচ্যের ওমানে থাকেন। কারণ বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত মালামাল ব্যাগেজ খুলে নতুন করে প্যাকেট করা হয়। সেখানে মার্কার কলম দিয়ে লেখা হয়, লিটন, ফ্রম ওমান। তবে গোটা এলাকাবাসী এমন তথ্য জানলেও কেবল তার স্ত্রী জানতেন আসলে তার স্বামী বাংলাদেশে।
এদিকে গত শুক্রবার রাতে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাড়কের মহামায়া এলাকায় এক প্রবাসীর গাড়ি আটকে ডাকাতি করে এই চক্র। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। চাঁদপুর সদর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রথমে মুন্সীগঞ্জ থেকে এই চক্রের এক সদস্যকে আটক করে। পরে গত দুই দিনের অভিযানে আরো চারজনকে আটক করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন উপপরিদর্শক মো. শাহজাহান।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, এই ডাকাতদলের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত গাড়ি, বিভিন্ন অস্ত্র ও লুণ্ঠিত মালামাল। তবে গাঢাকা দিয়েছেন ডাকাতদলের প্রধান লিটন।
এই চক্রের পাঁচ সদস্যকে ধরা হলেও মূলহোতা লিটনসহ অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায় জানান, চাঁদপুরে পুলিশের হাতে আটক শাহ পরানসহ চার ডাকাতের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে। অন্যজনের বাড়ি কুমিল্লায়। তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি জেলায় একাধিক ডাকাতির মামলা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, অন্য গাড়ির যাত্রীদের বিভ্রান্ত করতে এই ডাকাতদল পুলিশের গাড়ির রঙে একটি পিকআপ ব্যবহার করত। সেটিও এখন পুলিশের কবজায়।
কালের কন্ঠ
Leave a Reply