ভবতোষ চৌধুরী নুপুর: নির্মাণের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও আলোর মুখ দেখেনি মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের ৭ তলা নতুন ভবন। যদিও ডাক্তারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে জনবল নিয়োগের কার্যক্রম শেষের পথে। নতুন ভবনে আইসিইউ সুবিধাসহ রোগীরা আধুনিক সেবা পাবেন বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ভবনটি উদ্বোধন হলে ২৫০ শয্যায় উত্তীর্ণ হবে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল।
ভবনটির উদ্বোধনের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলছেন, পিডব্লিউডির হস্তান্তর সময় বারবার পরিবর্তনের কারণেই ভবনের উদ্বোধন পিছিয়েছে। কিন্তু গণপূর্ত বিভাগ বলছে, ২০২২ সালেই ৬ষ্ঠ তলা পর্যন্ত হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৭ম তলার আইসিইউ ও সিসিইউ ফ্লোরটি হস্তান্তর করা হয়েছে।
তাহলে কেন আটকে রয়েছে উদ্বোধন? কেন উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার প্রায় ১৫ লাখ মানুষ? এ প্রশ্নের সদুত্তর দিতে না পারলেও একে অপরের দোষারোপ করেছেন উভয় বিভাগের কর্মকর্তারা।
মুন্সীগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমূ হাজান হিরা বলেন, আমরা গত বছরই ৬ তলা ভবন হস্তান্তর করে দিয়েছি। হস্তান্তরের পর দীর্ঘসময় ভবনটিতে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা না করার ফলে বিভিন্ন ফ্লোরের স্যানেটারি, বাথরুম ফিটিংস, ইলেক্ট্রিক বিভিন্ন সরঞ্জামাদি অকেজো হয়ে গেছে। পাশাপাশি ফ্লোরগুলোও অপরিষ্কার হয়ে গেছে। এখানে আমাদের কোনো গাফিলতি নেই। আমরা সবকিছু পরিপূর্ণ করেই হস্তান্তর করেছি। তবে ইতিপূর্বে তারা আমাদের অনুরোধ করেছে তাই আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে দিচ্ছি। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। ২ থেকে ৪ দিন লাগবে।
অন্যদিকে মুন্সীগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, নতুন ভবনের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ও জনবল নিয়োগের কাজ প্রায় শেষের পথে। বর্তমানে ৪৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে হাসপাতালে। যাদের অনেককেই নতুন ভবনে শিফট করা হবে। ইতিমধ্যে নার্সও নিয়োগ হয়ে গেছে। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ পদের নিয়োগ বাকি রয়েছে। আগামী ২ দিনের মধ্যে গণপূর্ত সম্পূর্ণ ভবনটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। তারপর উদ্বোধনের সময় নির্ধারণ হবে।
তিনি বলেন, নতুন ৭ম তলা ভবনে ১৫০ শয্যার ব্যবস্থা থাকছে। ফলে হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উত্তীর্ণ হবে। ভবনটিতে রয়েছে আইসিইউ ও সিসিইউর ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে গণপূর্ত আইসিইউর ফ্লোরটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। সেখানে বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সংযোজনের কাজ করছে টেকনিশিয়ানরা। তবে স্যানেটারি, বাথরুম ফিটিংস, ইলেক্ট্রিক লাইনের সমস্যার কারণে গণপূর্তকে বলা হয়েছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো সমাধান করে দেওয়ার জন্য।
জেলার সর্বস্তরের মানুষের চিকিৎসার সুবিধার্থে সরকার জাইকার অর্থায়নে ২০১৩ সালে এই বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৩০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যায়ে পিডব্লিউডি তত্বাবধানে ২০১৮ সালের জুন মাসে মেসার্স নূরানী কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬ষ্ঠ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করে। পরবর্তীতে করোনা মহামারির সময় আইসিইউর প্রয়োজনীয় দেখা দিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখানে আইসিইউ বিভাগ বরাদ্দ দেয়। খরচ প্রায় ৫ কোটি টাকা। এর ফলে আরও এক তলা বৃদ্ধি করে ভবনটি ৭ তলা করা হয়। ইতিমধ্যে আইসিইউর জন্য বরাদ্দ করা ফ্লোরটি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে হস্তান্তর করা হলেও সম্পূর্ণ ভবনটি হস্তান্তর করেনি জেলা গণপূর্ত বিভাগ।
আধুনিক ব্যবস্থাসম্পন্ন নতুন ভবনটি নির্মিত হওয়ায় চিকিৎসাসেবার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে বলে মনে করছে জেলাবাসী। তবে কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ৫ বছরেও চালু হয়নি ভবনটি।
প্রতিনিধি/এসএস
Leave a Reply