ফয়সাল হোসেন: মুন্সিগঞ্জ শহরের উত্তর ইসলামপুর এলাকায় বসবাস করেন গৃহিণী মনিকা আক্তার। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ায় খরচ কমাতে এখন তিনি মাটির চুলায় রান্না করছেন। শুধু মনিকাই নন তাঁর মতো নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা গ্যাস সিলিন্ডার থেকে সরে এসে চুলায় রান্না করছেন।
গৃহিণী মনিকা আক্তার বলেন, বছরখানেক আগে তিতাসের গ্যাসে বাড়িতে রান্না হতো। লাইনের গ্যাসে চাপ না থাকায় আট মাস আগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। এর পর থেকে সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না শুরু করেন। এবার সিলিন্ডারের দামও হঠাৎ করে ২০০ টাকার মতো বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম। সংসার যেন আর চলছে না। তাই খরচ কমাতে বাধ্য হয়ে এখন মাটির চুলায় রান্না করছেন।
মনিকা আক্তার আরও বলেন, যাঁদের গ্যাসের চুলায় রান্নার অভ্যাস, তাঁদের জন্য মাটির চুলায় রান্না মোটেও সহজ কাজ নয়। সিলিন্ডারের যেমন দাম বেড়েছে, তাতে নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের সিলিন্ডারের খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
একই এলাকার তাজিবা আক্তার বলেন, ‘দুই বছর আগে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা করে গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতাম। দাম বাড়তে বাড়তে এ বছর ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা হয়। ১৫ দিন আগে সেই সিলিন্ডার কিনেছি ১ হাজার ৬০০ টাকায়। একদিকে মানুষের আয় দিন দিন কমছে, অন্যদিকে দ্রুত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। এভাবে টিকে থাকা মুশকিল।’
গতকাল শুক্রবার ও আজ শনিবার মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার, কালন্দিপাড়া, মোল্লাপাড়া, উত্তর ইসলামপুর, যোগনীঘাট ও রমজানবেগ এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গৃহিণীরা বাড়ির আঙিনায় বা পাকা বাড়ির মেঝেতে মাটির চুলা পেতে রান্না করছেন।
মোল্লাপাড়া এলাকার আঞ্জু বেগম বলেন, ছয় জনের সংসারে তিন বেলা সিলিন্ডারের রান্না করতে গেল মাসে দুটি সিলিন্ডার লাগে। গ্যাসের দাম হঠাৎ বেড়ে গেল। তাই এখন দুই বেলা মাটির চুলায় এবং রাতের সিলিন্ডারে রান্নার কাজ সারছেন।
অনেক বছর আগে সবাই মাটির চুলায় রান্না করতেন বলে জানালেন রমজানবেগ এলাকার রাবেয়া বসরি। তিনি বলেন, মানুষ আধুনিকতার যুগে প্রবেশ করেছেন। কাঁচা ঘর থেকে পাকা ঘরে বসবাস শুরু করেছেন। প্রতিটি ঘরে সিলিন্ডার গ্যাসে রান্না শুরু হয়েছিল। সে সময় বেড়ে গেল সিলিন্ডারের দাম।
লৌহজং উপজেলার মাইজগাঁও এলাকার বাসিন্দা বিকাশ কুমার রায়। তিনি স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বিকাশ বলেন, দিন যত যাচ্ছে জীবনজীবিকা চালানো খুব বেশি কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সিলিন্ডারের দাম একলাফে ২০০ টাকা বেড়ে গেল। খরচ কমাতে তাঁর মা মাটির চুলায় রান্না করেন। শুধু সিলিন্ডার নয় সব কিছুর দাম বেড়েছে। এতে নিম্নবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সরকারের উচিত, মানুষের আয় বাড়ানো, নয়তো জিনিসপত্রের দাম কমানো।
মুন্সিগঞ্জ শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়। পঞ্চসার এলাকার রেয়ার করপোরেশনের সিলিন্ডার বিক্রয় প্রতিনিধি আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে গ্যাস সিলিন্ডার পাইকারি পর্যায়ে সাড়ে ১৫০০ থেকে ১৫৮০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। তবে বর্তমানে ১৫৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়েছে। আবারও গ্যাসের দাম বাড়তে পারে। দাম বাড়ায় ভোক্তারা যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনি ব্যবসায়ীদের লাভের পরিমাণ কমে গেছে।
প্রথম আলো
Leave a Reply