ডাল ও ভর্তা ভাত খেতেই ধারদেনা

ফয়সাল হোসেন: মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নের মূলচর এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন সরকার (৬০)। তিনি একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক। যাত্রীর অপেক্ষায় রিকশা নিয়ে দিঘীরপাড় বাজারে গত রোববার সকালে তাঁকে বসে থাকতে দেখা যায়। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে একজন যাত্রীও পেলেন না।

সেখানে আলাপকালে শামসুদ্দিন সরকার বলেন, বছরখানেক আগে মানুষ এখান থেকে ওখানে গেলেও রিকশায় উঠতেন। প্রতিদিন রিকশা চালিয়ে আট থেকে নয় শ টাকা ভাড়া পেতেন। মাঝেমধ্যে এক হাজার টাকাও পেতেন। রিকশা ভাড়া সাড়ে তিন শ টাকা জমা দিয়ে যা থাকত, তা দিয়ে ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সংসার মোটামুটি চলত। আর এখন মানুষ ছোট দূরত্বের রাস্তা পায়ে হেঁটে যায়। ফলে সারা দিনে এখন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার ওপরে ভাড়া মারতে পারেন না। এরই মধ্যে সব জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। ভালো খাওয়া তো দূরের কথা, ডাল ও ভর্তা ভাত খেতেই তাঁকে ধারদেনা করতে হচ্ছে।

শামসুদ্দিন সরকারের মতো একই অবস্থা অন্য রিকশাচালকদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রিকশাচালক শুকুর আলী। তাঁর বাড়িও একই ইউনিয়নের। শুকুর আলী বলেন, সংসার আর চলে না। এক বছর আগে মোটা চাল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে কিনেছেন। এখন সেই চাল ৬০ টাকা কেজি। আটা ছিল ৩০ টাকা। এখন কেনেন ৬৫ টাকায়। ডাল, চিনি, তেল সবকিছু দাম বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় টিকে থাকতে রোজগারও দুই গুণ বাড়ানোর দরকার ছিল। উল্টো কমে গেছে। কীভাবে সংসার চালাবেন বুঝতে পাচ্ছেন না।

মুন্সিগঞ্জ শহরের হাট লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার রিকশাচালক মো. আবদুল হক। গত মঙ্গলবার সকালে লঞ্চঘাট এলাকায় যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি করছিলেন। শহরের কাচারি ঘাট যাওয়ার জন্য ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই আবদুল হক বলেন, ‘দুই বছর আগে ভাড়া আছিল ২০ ট্যাকা। এহনো ২০ টাকাই দিয়েন। এর বেশি বললে তো কেউ রিকশায় উঠব না। আমাগো তো হইছে মরণ। সরকার-ব্যবসায়ীর প্রতিদিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায়, আমরা তো ভাড়া বাড়াইতে পারি না। উল্টো আগে যা কাম করতাম, তার চেয়ে কমছে।’

শহরের কাচারি ঘাট এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে যাত্রীর আশায় বসেছিলেন শাহীন মোল্লা। তিনি জানালেন, গাড়িতে আগের মতো যাত্রী পাওয়া যায় না। প্রতিদিন জমা সাড়ে ৫০০ টাকা। দিন শেষে এ টাকা গ্যারেজ মালিককে দিতেই হয়। টাকা জমা দেওয়ার পর ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা থাকে তাঁর, যা দিয়ে দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ, ঘরভাড়া পরিশোধ করতে হয়। অসুখ-বিসুখ হলে তো দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

মুন্সিগঞ্জ বড়বাজারের হাজি আবুল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. আল-আমিন হোসেন বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। মানুষের মধ্যে কিছুটা অভাব দেখা যাচ্ছে। আগে যিনি পাঁচ লিটার তেল কিনতেন, সেই ব্যক্তি তিন লিটার তেল নিচ্ছেন। শৌখিন পণ্য কেনাকাটা একেবারে কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ। চার মাস আগে প্রতিদিন দোকানে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা বিক্রি হতো। এখন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

একই বাজারের আকাশ স্টোরের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম যখন কম ছিল, তখন বিক্রি বেশি হতো। দাম বাড়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে। এতে ক্রেতারা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, ব্যবসায়ীরাও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.