মুন্সীগঞ্জে চলছে আলু উত্তোলনের মৌসুম

দেশের সর্ববৃহৎ আলু উৎপাদনকারী মুন্সীগঞ্জ জেলার ৬টি উপজেলায় চলছে আলু উত্তোলনের কার্যক্রম। আলু উৎপাদন ভালো হলেও এ বছর আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অন্যান্য বছরের চাইতে কম বলে জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

বার বার লোকসানের মুখে পড়ে আলু থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক কৃষক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় আলু আবাদ হয়েছে ৩৪ হাজার ৪শ ৪৬ হেক্টর জমিতে। যার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লাখ মেট্রিকটন। তবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা চাইলে আলু উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কয়েক বার লোকসানের কারণে আলু চাষ কম করেছে স্থানীয় কৃষকরা। এদিকে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়াতে অনেক জমির আলু আকারে ছোট হয়েছে। দাম নিয়ে শংকায় আছে স্থানীয় কৃষকরা। ইতোমধ্যে জেলার সর্বত্রই আলু উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। তবে কৃষকদের মুখে নেই হাসি। গত কয়েক বছর লোকসানের মুখে পড়ে কৃষকরা হতাশা নিয়েই এ বছর আলু উত্তোলন করছে। কৃষক আলতু গাজী জানান, এখন আলু উত্তোলনের সময়। এক কানি মানে ১শ ৬০ শতাংশ জমিতে আলু উৎপাদন করতে ২ লাখ টাকা খরচ হয়। বর্তমান বাজারে বস্তা প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে ৫শ ৫০ টাকা দরে।

যদি আলু উত্তোলন করে এই দামে বিক্রি করতে হয় তাহলে আমাদের লোকসান হবে। এ বছর কৃষক আলু চাষ করেছে কম। এ কারণে এ বছর আলু হয়েছেও কম। তবে ফলন ভালো হয়েছে। সরকার যদি আলু বিদেশে রফতানি করার ব্যবস্থা করে তাহলে কৃষকরা বেঁচে যাবে। কৃষক হাজী মো. আবু সাইদ জানান, এ বছর ২১ কানি জমিতে আলু আবাদ করেছি। তবে আলু ফলন ততটা ভালো না। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আলু ছোট ছোট হয়েছে, তাই আলুতে লাভ হবার সম্ভাবনা কম। গত ৩-৪ বছর যাবত আলুতে লোকসান হচ্ছে। এবারও যদি এমন হয় তাহলে অনেক কৃষক আলু চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে। ইতোমধ্যে অনেকেই আলু আবাদ কম করে অন্যান্য ফসল চাষ করেছে। সরকার আলু সারে ভর্তুকি ঠিকই দেয়। কিন্তু এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা আছে তারাই সব খেয়ে ফেলে। এই গ্রামে সবচাইতে বেশি আলু আবাদ আমি করি। কিন্তু এ বছর একটার সার কিংবা এক টাকার বীজ কিংবা কোনো ওষুধ পাই নাই।

অপর এক কৃষক জামাল মিয়া জানান, আমি পূর্বে আলু আবাদ করলেও গত কয়েক বছর যাবৎ আলু আবাদ করে লোকসানের মুখে পড়েছি। তাই এ বছর আলু আবাদ করিনি। আলুর আবাদের প্রতি আমার আর নেশা নাই। তাই আমার জমিতে এ বছর বিভিন্ন সবজির চাষ করেছে। এতে আমি অনেক লাভবান হয়েছি। তাই আমি অন্যান্য কৃষকদের বলবো। আলুর মৌসুমে আলু আবাদ না করে অন্যান্য ফসল আবাদ করলে ভালো মুনাফা পাওয়া যাবে। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা) এবি এম ওয়াহিদুর রহমান জানান, গত ৪-৫ বছর যাবৎ আলুতে কৃষকরা লাভবান হয়নি। তাই এ বছর রবি মৌসুমে সরিষা, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল করেছে স্থানীয় কৃষকরা। আর তাই এ বছর ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে। যেখানে গতবছর ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিল। আলু কর্তনের মৌসুম চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমির আলু কর্তন করা হয়েছে। কৃষকদের কথা চিন্তা করে এ বছর কিছু আলু বিদেশে রফতানি করা হবে। ঢাকা মেইল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.