পাঁচগাও ইউপি নির্বাচনে নৌকার জয়লাভ

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাও ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এইচ এম সুমন হালদার ২০৩৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়া প্রতীকের শেখ সেলিম পেয়েছেন ১৭৮৫ ভোট। এছাড়াও ১৩৪৬ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন আনারস প্রতিকের মঞ্জুর আলি শেখ, অটোরিকশা প্রতিকের মিজান মোল্লা পান ১১৮৫ ভোট, রজনীগন্ধা প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলি জাফর পান ১০০২ ভোট, মোটর সাইকেল প্রতিকের আলি আহম্মদ শেখ পেয়েছেন ৮৪৫ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের মোস্তফা শেখ হাত পাখা প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ৩৮৫ ভোট, সাবেক চেয়ারম্যান মিলেনুর রহমান মিলন চশমা প্রতিক নিয়ে পেয়েছেন ২৫৪ ভোট,টেবিল ফ্যান প্রতিক নিয়ে শেখ ফরিদ পেয়েছেন ৮০ ভোট এবং টেলিফোন প্রতিক নিয়ে সাগর আহম্মেদ পেয়েছেন ৬৬ ভোট। সোমবার (১৩ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ওই ইউপি নির্বাচনে ভোট গ্রহন শুরু হয়। তবে ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোট চলে ধীরগতিতে। ফলে ভোট সম্পূর্ণ হতে অনেক কেন্দ্রে রাত হয়ে যায়।

বিশেষ করে পাঁচগাঁও আলহাজ্ব ওয়াহেদ আলী দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয়, দশত্তর শামসুন্নাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাঁইচ মালদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মান্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পোদ্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। তীব্র রোদ আর ইভিএমে ধীরগতির কারণে ভোগান্তির শিকার হয় ভোটাররা। সরেজমিনে পাচগাঁও ওয়াহেদ আলি দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয়,গারুগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মান্দ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, , পোদ্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,গণাইসার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের কেন্দ্রের বাহিরে লাইনে দাড়িয়ে থাকতে দেখাযায়। দীর্ঘ সময় রোদে দাড়িয়ে থেকে আক্ষেপ প্রকাশ করতে থাকেন ভোটাররা। দুপুর ১২টার দিকে পাচগাঁও আলহাজ্ব ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে ভোটাররা একযোগে ইভিএম পদ্ধতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এ সময় ভোট কেন্দ্রের বাইরে কয়েকশ নারী ও পুরুষকে ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

কেন্দ্রগুলোর ২০ থেকে ২২ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, এর আগে তারা কখনও ইভিএম মেশিনে ভোট দেইনি।এটিই প্রথমবার ইভিএমে ভোট দেওয়া। বিষয়টি সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় কিভাবে ভোট দিতে হবে কেউ তা জানে না। এ বিষয়ে কোনো প্রচার-প্রচারণাও ছিল না। ভোট দিতে এসে সব ভোটারদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেন্দ্রের বাহিরে প্রচুর রোদ। তাই অনেকে ভোট না দিয়ে ফিরে যায়। চাঠাতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেলা ১১ টার দিকে দেখা যায় ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার এসএম শওকত ইমরান ভোটারদের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার ইভিএমে ভোট দেওয়ার পদ্ধতি শিখাচ্ছেন ‌ । কিন্তু তারপরেও কেন্দ্রের ভিতরে গিয়ে ঠিকমতো ভোট দিতে পারছে না ভোটাররা। পাচগাঁও ওয়াহিদ আলী দেওয়ান উচ্চ বিদ্যালয় বেলা বারোটার দিকে ভোটার সবুজ বাগ বলেন, সকাল সাড়ে ৮ বাজে ভোট দিতে এসে লাইনে দাঁড়াই‌। ‌

প্রচন্ড রোদের কারণে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে আর দাঁড়াতে শক্তি পাচ্ছিলাম না পরে লাইনে ছেড়ে চলে যাই। এখন আবার সিরিয়াল কমলে পরে ভোট দিবো ‌। বেলা সোয়া ১০ টার দিকে গণাইসার প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নারী-পুরুষ ভোটারদের রোদে শক্ত কাগজের(কার্টুন) অংশ মাথায় ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় । এ সময় মুক্তা বেগম(৫৫) নামে এক নারী বলেন, সকাল ৮ টার আগে ভোট দিতে এসেছি। দুই ঘন্টার বেশি সময় লাইনে দাড়িয়ে আছি। একজন ভোটার ভেতরে গেলে সহজে বাহিরে আসেনা।আমাদের লাইনও শেষ হয় না। আমি হাই প্রেসারের রোগী। রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থেকে প্রেসার আরো বেড়ে যাচ্ছে। এ কেন্দ্রের আরেক ভোটার তানজিলা আক্তার বলেন, সকাল সাতটায় ভোট দেওয়ার জন্য এসেছিলাম। দীর্ঘসময় সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ছিলাম।সাড়ে ১০ টার দিকে ভোটার কক্ষে সামনে আসতে পেরেছি।ইভিএম মেশিনে প্রথমবার ভোট দিচ্ছি আমরা। কিভাবে ভোট দিতে হয় জানিনা। ভোট দিতে অনেক সময় লাগছে। এ জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়াতে হয় থাকতে হচ্ছে। গণাইশার এলাকার জয়নাল আবেদীন বলেন,ব্যালটেই ভোট মেশিনে ভোট আমাদের জন্য অনেক কষ্ট হয়ে গেছে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারছিনা ভোট দিতে পারছিনা আমাদের আগের ব্যালট পেপারে ভোটে ভালো ছিল।

একই চিত্র দেখাযায় চাঠাতিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। সেখাকানকার আরেক ভোটার মন্ডলী ভদ্র কৃষ্ণ দাস বেলা পৌনে ১১ টার দিকে বলেন,সকাল আটটা থেকে কেন্দ্রে এসে দাঁড়িয়ে আছি।ভোটাররা ভেতরে গেলে আর আসছেনা। ইভিএমেে কোন প্রচারণা ছিলনা। মানুষের অভিজ্ঞতা নেই। এমন ভোটের কারনে সবাই ভোগান্তিতে পড়েছি। কেন্দ্রটির সহসহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন,ইভিএমে কিভাবে ভোট দিতে হয় ভোটাররা জানেনা। নির্বাচন অফিস থেকেও এই বিষয়ে ভোটারদের অবগত করা হয়নি। ভোটাররা ভিতরে এসে ঠিকমতো ভোট দিতে পারছেন না। আমরা তাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছি। এরপরে অনেকে ভুল করছেন। এ কারণে সময়টা বেশি লাগছে। গণাইসার কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা দেবাশীষ সিংহ বলেন, এর আগে ইভিএমে ভোট দেয়নি এখানকার ভোটাররা। এই জন্য কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে তারা। তবে আমরা মানুষজনকে বুঝিয়ে দিচ্ছি ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মু. রাশেদুজ্জামান বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এইচ এম সুমন হালদার ২০৩৩ ভোট পেয়ে ওই ইউনিয়নে জয়ী হয়েছেন ।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন শেখ সেলিম। তিনি ইভিএম এ ভোট গ্রহণে ধীর গতির ব্যাপারে বলেন ইভিএম ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকায় ভোটগ্রহণে একটু বিলম্বিত হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ ও অভাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য পাচঁগাও ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১২হাজার ৮৯৬ জন। ৮৮৫৯ ভোট কাস্টিং হয়েছে। মোট ১০ টি ভোট কেন্দ্রের ৩৫টি বুথে ইবিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেয়ারম্যান পদে ১০ জন,২৭ জন সাধারণ সদস্য ও ৯জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। উল্লেখ্য নদী ভাঙনো সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় এ নিয়ে পূর্বে উচ্চ আদালতে মামলা ছিল। এজন্য দেশের অন্যান্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় এ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

লাখোকণ্ঠ

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.