মুন্সীগঞ্জ-১: বিকল্পধারাকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ

মোজাম্মেল হোসেন সজল: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আদৌ হবে কি হবে না, আর হলেও বিএনপিসহ সবদলের অংশগ্রহণ থাকবে কি থাকবে না, না কি তৃতীয় কোনো শক্তি দেশের শাসনভার নেবে– রাজনীতির এমন আলাপ-আলোচনা সর্বত্র বিরাজমান। এর মধ্যেও বসে নেই শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সীগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা।

আগামী নির্বাচনে বিকল্পধারার প্রার্থীকে ছাড় দিতে নারাজ এখানকার আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে বিকল্পধারার প্রার্থী মাহী বি চৌধুরী জয়ের লক্ষ্যে শেষ অবধি তাদের মার্কা কুলা প্রতীক ছেড়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, এই আসনে আওয়ামী লীগ যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত দল। বাইরের প্রার্থী এখন আর দরকার নেই।

এদিকে, মুন্সীগঞ্জ জেলায় বর্তমানে বিকল্পধারা নামের সংগঠনটি অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। কাগজে কলমে সংগঠনটি থাকলেও নেই জনসমর্থন। নেই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো কমিটি। নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য হলেও এলাকার ভোটারদের সঙ্গে মাহী বি চৌধুরীর কোনো সম্পৃত্ততা নেই।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মতে, এখানে বিকল্পধারার অবস্থান সুসংগঠিত না থাকায় মাহী বি চৌধুরী গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামেন। বাইরের লোক হওয়ায় নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও তাকে জয়ী করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে।

এদিকে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মুন্সীগঞ্জ-১ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় প্রতিটি কর্মসূচিতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতেও তাদের অংশগ্রহণ থাকছে।

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য বিকল্পধারা মুখপাত্র মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রার্থী হিসেবে থাকছেন।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে মূল আলোচনায় আছেন অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, মো. মাকসুদ আলম ডাবলু, গোলাম সারোয়ার কবির ও ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া শিমুল।

এছাড়াও, সম্ভাব্য তালিকায় আছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সিরাজদিখান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ। তাদের মধ্যে নির্বাচনী এলাকায় দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে সবার আগে রয়েছেন তিন সম্ভাব্য প্রার্থী মো. মাকসুদ আলম ডাবলু, গোলাম সারোয়ার কবির ও ব্যারিষ্টার গোলাম কিবরিয়া শিমুল।

চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও একই কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু।

মাকসুদ আলম ডাবলু বর্তমানে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য। তিনি ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানী অব বাংলাদেশের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক (বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের একটি প্রতিষ্ঠান)। তিনি একাধারে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জহুরুল হক হলের সহ-সভাপতি। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনসহ নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তিনি দলীয় প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন।

সাবেক ছাত্রনেতার নাম গোলাম সারোয়ার কবির। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ও কমিটি নিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষের সঙ্গে তার দফায় দফায় সংঘর্ষ ও রক্তারক্তির ঘটে শ্রীনগরে। অসুস্থ হয়ে সুকুমার রঞ্জন ঘোষ এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছেড়ে দিলেও মাঠ ছাড়েননি গোলাম সারোয়ার কবির।

কবির বর্তমানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, ঢাকা দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির কমিটির সহ-সম্পাদক ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক।

এবার নতুন মুখ হিসেবে এলাকায় জনসংযোগ ও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া শিমুল। স্থানীয় অনেক নেতাকর্মীর আস্থাভাজনে পরিণত হয়েছেন তিনি। তিনি ইউকে আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক উপ-কমিটির একজন সদস্য।

নুরুল আলম চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতবিদ ও ক্রীড়া সংগঠন হিসেবে পরিচিত।

মাকসুদ আলম ডাবলু বলেন, এই নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী এবং এই অঞ্চলের মানুষের আস্থার প্রতীক দলে পরিণত হয়েছে। গত নির্বাচনে কৌশলগত কারণে বিকল্পধারাকে ছাড় দিতে হয়েছে। এখন আর অন্য দলের কাউকে নিয়ে চিন্তা ভাবনার দরকার নেই। এখানে নৌকার জয় হবেই।

গোলাম সারোয়ার কবিরও মনে করেন, এই নির্বাচনী এলাকার ২৮টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অবস্থান সুসংগঠিত। তিনি গত ১০ বছর ধরে এই নির্বাচনী এলাকায় দলের পক্ষে কাজ করছেন। বাইরের প্রার্থী এখন আর দরকার নেই। দলের অবস্থা যখন খারাপ হয় তখন বাইরের প্রার্থীর প্রয়োজন হয়। কিন্তু এখানে আওয়ামী লীগ এখন বেশ শক্তিশালী এবং ভোটারদের আস্থার দল। উন্নয়নই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এরপরও নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা তা মেনে নিয়ে কাজ করবো।

ব্যারিষ্টার মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া শিমুল বলেন, তিনি একজন যোগ্য প্রার্থী। বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি ও আরও বেশি উন্নয়নের জন্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা জরুরি।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের সঙ্গে জড়িত। দেশ ও দেশের বাইরে কাজ করে যাচ্ছি। নেত্রী অন্য কাউকে যোগ্য প্রার্থী মনে করলে যাকে নমিনেশন দেবেন তার পক্ষে বা নৌকার পক্ষে কাজ করবো।

অবজারভার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.