মুন্সিগঞ্জের কাইউম আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হলেন লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরে

সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের পশ্চিম শিয়ালদি গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ছেলে কাইউম হাওলাদার। বর্তমানে সে যুক্তরাষ্ট্রের মিডওয়ে ইউনিভার্সিটির স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি লুঙ্গি, গামছা, পাঞ্জাবি পরে হাজির হয়েছিলেন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

কাইউম হাওলাদার নিজেই লিখেছেন তার সেদিনের অভিজ্ঞতার কথা। নিচে তার পুরো লেখা তুলে ধরা হলো-

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক আমি। ২০১৫-১৬ সেশনের ছাত্র ছিলাম। গত বছর ডিসেম্বরের শেষে উচ্চ শিক্ষার জন্য চলে আসি যুক্তরাষ্ট্রে, স্নাতকোত্তর ভর্তি হই কেন্টাকির মিডওয়ে ইউনিভার্সিটিতে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম দিন গিয়ে একটু অবাকই হলাম। জানলাম, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ও প্রথম বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আমি। যেভাবে জানলাম, সেই ঘটনাও অনেকটা নাটকীয়। পড়ালেখার জন্য লাইব্রেরিতে গিয়েছি। দেখি ২৫-৩০টি দেশের পতাকা সাজানো। জিজ্ঞাসা করে জানলাম, এখানে যেসব দেশের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করেছেন বা বর্তমানে লেখাপড়া করছেন, তাদের সম্মানে তাদের দেশের পতাকা রাখা হয়। কোথাও বাংলাদেশের পতাকা নেই দেখে একটু মন খারাপই হলো।

বাসায় ফিরেই পতাকার দাবি জানিয়ে একাডেমিক উপদেষ্টাকে মেইল করলাম। তিনি খুবই আনন্দের সাথে মার্কেটিং টিমকে পতাকা কেনার দায়িত্ব দিয়ে দিলেন। যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আমি, সেই জায়গা থেকে সব সময় চেয়েছি নিজের দেশ ও সংস্কৃতিকে উপস্থাপন করতে।

লুঙ্গি, গামছা, পাঞ্জাবি দেশ থেকেই সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। অতএব পরিকল্পনা ছিল, একদিন লুঙ্গি পরে ক্লাস করে সবাইকে চমকে দেব। এর চেয়ে বড় সুযোগ চলে এল একদিন। ক্লাস শুরুর এক মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান—কালারস অব মিডওয়ে ইউনিভার্সিটি। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অভিভাবক—সবাই উপস্থিত ছিলেন। বুঝলাম, এটাই মোক্ষম সুযোগ। অনুষ্ঠানে লুঙ্গি, পাঞ্জাবি ও কোমরে গামছা বেঁধে উপস্থিত হয়ে গেলাম। মজার বিষয় হলো, ভিনদেশি বন্ধুরাই আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে এ সময়। অনুষ্ঠানের শুরুতে নিজ দেশের জাতীয় পতাকার মাধ্যমে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। এরপর নিজের দেশ ও দেশের সংস্কৃতি নিয়ে বলার জন্য আমাকে মঞ্চে ডাকা হয়। বাঙালি সাজ নিয়ে মঞ্চে ওঠার পর থেকেই উপস্থিত সবার সে কী তালি! আমার তেমন কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। তারপরও ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস, দেশীয় খাবার, মানুষের সরলতা, অসাম্প্রদায়িকতা, পোশাকশিল্প, কক্সবাজার, সুন্দরবন ইত্যাদি বিষয়ে যতটুকু সম্ভব বলেছি।

নাচ, গান, বিভিন্ন খেলাধুলা, আর সব শেষে পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। সবার উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, ভালোবাসায় দারুণ একটা দিন কেটেছিল সেদিন।

নিউজজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.