ঘুচবে ৭৫ বছরের দুর্ভোগ: গজারিয়ায় মেঘনা সেতু হচ্ছে

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল: মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা সেতু হচ্ছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা নিয়ে ইতোমধ্যে সদর উপজেলা ও গজারিয়া উপজেলায় মতবিনিময় সভা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলার একটি বিচ্ছিন্ন উপজেলা গজারিয়া। নদী বেষ্টনীর কারণে উপজেলা থেকে জেলা সদরের সহজতর যোগাযোগের মাধ্যম মেঘনা নদী। আর নদী পারাপারে ব্যবহৃত হয় একমাত্র নৌযান ট্রলার। ঝড়-বৃষ্টি এবং উত্তাল মেঘনা ঢেউ উপেক্ষা করে প্রায় ৭৫ বছর যাবৎ যাতায়াত করে আসছে উভয় পাড়ের মানুষ। এই উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষের দাবি একটি ব্রিজ। আর এই দাবি পূরণের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে মুন্সীগঞ্জ ও গজারিয়া অংশে মেঘনা নদীতে ব্রিজ তৈরির জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ শেষে প্রকল্পটির সমীক্ষা কাজ চলছে। গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ সড়কে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা কাজের ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রভাব নিরূপণ স¤পর্কিত এক মতবিনিময় সভা মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে উত্তাল মেঘনা নদী কিংবা নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কযোগে ৭০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। যেখানে ২ কিলোমিটারের একটি ব্রিজ হলেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানে নির্ভয়ে পারাপার হওয়া যায় গজারিয়া থেকে মুন্সীগঞ্জ কিংবা মুন্সীগঞ্জ থেকে গজারিয়া। এই ব্রিজ নির্মিত হলে শুধু মুন্সীগঞ্জ নয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহন জনসাধারণও এই পথে ভবেরচর হয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে খুব সহজেই যাত্রীবাহী যানবাহনসহ পণ্যবাহী গাড়ি অতি সহজেই দক্ষিণাঞ্চল থেকে কুমিল্লা, লাকসাম, ফেনী, বি.বাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ ত্রিপুরা, অসম ও মিয়ানমার যাতায়াত করতে পারবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে দেশের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলো স্বাবলম্বী হবে।

মেঘনার দুই পাড়েই মতবিনিময়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস এমপি। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিফা খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস। প্রকল্পের সমীক্ষা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনিছউজ্জামান আনিছ, প্রকল্প পরিচালক মো. লিয়াকত আলী, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এস কে ব্যানার্জী, সমাজ বিশেষজ্ঞ মো. মঞ্জুর, সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. সুরেশ কউল, মহাসড়ক বিশেষজ্ঞ মো. রাকিব, পরামর্শক প্রতিনিধি মি. কারলিওস, মুন্সীগঞ্জের রামপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাচ্চু শেখ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওয়াশিম আলী।

ব্রিজ হবে ক্যাবেল স্টেইড ॥ পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. সমর কুমার ব্যানার্জী বলেছেন, বিবিএ যে ব্রিজ করবে তাতে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেই বাংলাদেশে সব ব্রিজ হবে। মেঘনা নদীর ওপরে দুই কিলোমিটারের বেশি একটি ব্রিজের সঙ্গে আরও কিছু ছোট ব্রিজ আছে। এই ব্রিজ যখন কনস্ট্রাকশন হবে তখন পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না। পরিবেশ সংক্রান্ত বিধিমালা আছে বাংলাদেশে। সেই বিধিমালাকে অনুসরণ করা হবে এবং সেই বিধিমালা অনুসারে এই প্রজেক্ট কিন্তু রেড ক্যাটাগরির হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে যে ছাড়পত্র দরকার হবে সেটা নেওয়া হবে। সোমবার সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ সড়কে মেঘনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা কাজের ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন প্রভাব নিরূপণ সম্পর্কিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অ্যাপ্রোচ সড়ক ১৯ কিলোমিটার ॥ গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ মেঘনা নদীর ওপর পুরো সেতু ও দুই প্রান্তের অ্যাপ্রোচ সড়কসহ পুরো এলাইনমেন্টে দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯.০৪ কিলোমিটার। সেতু কর্তৃপক্ষ জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রায় ৯’শ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। মেন ব্রিজের দৈর্ঘ্য ২.৪২০ কিলোমিটার, অ্যাপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য (গজারিয়া প্রান্ত) ১০.৪৮ কিলোমিটার, অ্যাপ্রোচ রোড (মুন্সীগঞ্জ প্রান্ত) এর দৈর্ঘ্য ৮.৯৪ কিলোমিটার।
সমীক্ষা শেষ হবে জুনে ॥ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস বলেছেন, প্রকল্পটির সমীক্ষা কাজ চলছে। আমরা এলাইনমেন্ট ঠিক করেছি। আজকের মতবিনিময় সভার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে অবহিত করা।

তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তারা এই প্রকল্পটি চায় কিনা। কারণ কোনো প্রজেক্টে যদি জনগণের কল্যাণে না আসে জনগণ না চায়। সরকার সে ধরনের প্রজেক্ট সাধারণত নেয় না। চলমান সমীক্ষা ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। এর পরবর্তী ধাপ হিসেবে সরকারের কাছ থেকে আর্থিক অনুমতি নেওয়া, তারপরে ডিপিপি প্রণয়ন করা, কন্ট্রাক্টর, কনসালটেন্ট নিয়োগ করার কাজগুলো হবে।

যানজট থেকে মুক্তি ॥ গজারিয়া-মুন্সীগঞ্জ ব্রিজের প্রকল্প পরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেছেন, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসতে যে যানজট তৈরি হয়। সেই যানজটকে বাইপাস করে এই ব্রিজের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ তথা পদ্মাপাড়ের মানুষও সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে কোন জায়গায় সেতু তৈরির জন্য শর্টেজ এবং সেখানে নদীর ভাঙন কিংবা পরিবেশের ক্ষতি হয় কিনা তা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের বিষয় রয়েছে। এখন খরচ হিসাব করে কাজ শুরু হবে।

জনকন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.